এ বার শিক্ষক দিবসে স্কুলে স্কুলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতা শোনার ব্যবস্থা করতে বলেছে দিল্লি। কিন্তু এ রাজ্যে ওই দিন সব স্কুলে মোদীর বক্তৃতা শোনানো বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশিকা জারি করে খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের তোপের মুখে পড়েছেন স্কুলশিক্ষা দফতরের দুই আধিকারিক।
ওই দুই আধিকারিকের মধ্যে এক জন অস্থায়ী ভাবে স্কুলশিক্ষা কমিশনারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বলে জানান মন্ত্রী নিজেই। পার্থবাবু মঙ্গলবার জানান, রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে কেন ওই নির্দেশিকা আপলোড করা হয়েছিল, তা জানতে চেয়ে দুই আধিকারিককেই শো-কজ করা হচ্ছে। এ দিন সন্ধ্যায় দফতরের ওয়েবসাইট থেকে ওই নির্দেশিকা সরিয়েও নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি জানায়, শিক্ষক দিবসে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দেবেন। সেটি স্কুলে স্কুলে টেলিভিশন বা রেডিওর মাধ্যমে বাধ্যতামূলক ভাবে শোনাতে হবে ছাত্রছাত্রীদের। সেই নির্দেশিকাকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্র আদৌ এমন নির্দেশ দিতে পারে কি না, প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষামহলে। রাজ্য সরকার যে এই নির্দেশ মানতে মোটেই আগ্রহী নয়, সেই ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে।
তা সত্ত্বেও কেন্দ্রের ওই নির্দেশিকা শিক্ষা দফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। জানিয়ে দেওয়া হয়, সব স্কুলই এই নির্দেশ মানতে বাধ্য। সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত না-হওয়া সত্ত্বেও এমন ঘটনা ঘটল কী ভাবে?
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এক শীর্ষ কর্তার নির্দেশেই এই কাজ করেন ভারপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষা কমিশনার এবং অন্য এক আধিকারিক। কিন্তু সেই শীর্ষ কর্তা এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত নন বলে সরকারের পক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে সরাসরি ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। এই অবস্থায় ওই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে সংশ্লিষ্ট দুই আধিকারিককেই শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এ দিন বারবার চেষ্টা করেও ভারপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষা কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। এক বার ফোনের জবাব দিলেও বার কয়েক ‘হ্যালো’ বলে লাইন কেটে দেন তিনি। তার পরে আর ফোন ধরেননি। এসএমএস করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তার কোনও জবাব দেননি।
শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষোভের কারণ কী?
পার্থবাবু এ দিন বলেন, “কেন্দ্রের ওই নির্দেশিকা বলবৎ করা হবে বলে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। তা সত্ত্বেও সেটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। এটা হল কী করে, শো-কজের চিঠি দিয়ে তা জানতে চাওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে।”
মন্ত্রী জানান, বিগত তিন বছরের মতো এ বারেও শুধু স্কুলশিক্ষা দফতরের অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই শিক্ষক দিবস পালন করবে রাজ্য। অন্যান্য বছরের মতোই সেখানে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১০০ জন শিক্ষককে সম্মানিত করা হবে। তা ছাড়া এ বারেই প্রথম ১০০টি স্কুলকে উৎকর্ষের জন্য পুরস্কৃত করবে রাজ্য সরকার। নতুন পাঠ্যক্রমে তৈরি কয়েকটি পাঠ্যবইও আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করবেন মুখ্যমন্ত্রী।