জাত তুলে নিগ্রহ প্রমাণিত হলেই কড়া শাস্তি: পার্থ

কয়েক দিন ধরে রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষকদের একটি অংশ অভিযোগ করেছেন, সেখানকার টিএমসিপি নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের এক দল সদস্য ভূগোল বিভাগের আদিবাসী শিক্ষিকা সরস্বতী কেরকেটাকে জাত তুলে অপমান করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৯ ০২:১৬
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র শাখারই কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে জাত তুলে শিক্ষক-নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আদিবাসী শিক্ষিকাকে জাত তুলে অপমান এবং কয়েক জন শিক্ষককে হেনস্থার সেই ঘটনায় অভিযুক্তেরা দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বহিষ্কারও করা হবে বলে মঙ্গলবার রবীন্দ্রভারতীতে গিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই প্রেক্ষিতে পদত্যাগী শিক্ষকেরা ইস্তফা তুলে নিয়েছেন।

Advertisement

কয়েক দিন ধরে রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষকদের একটি অংশ অভিযোগ করেছেন, সেখানকার টিএমসিপি নিয়ন্ত্রিত ছাত্র সংসদের এক দল সদস্য ভূগোল বিভাগের আদিবাসী শিক্ষিকা সরস্বতী কেরকেটাকে জাত তুলে অপমান করেন। কয়েক জন শিক্ষক তার প্রতিবাদ করায় তাঁদেরও হেনস্থা করা হয়। এর প্রতিবাদে সোমবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত, শিক্ষা, অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধানেরা পদত্যাগ করেন। ইস্তফা দেন বাংলাদেশ স্টাডি সেন্টার ও স্কুল অব ল্যাঙ্গোয়েজের ডিরেক্টর এবং অম্বেডকর স্টাডি সেন্টারের ডিরেক্টর।

পুরো বিষয়টিকে ঘিরে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায় রবীন্দ্রভারতীতে। এ দিন বেলা ১টা নাগাদ খোদ শিক্ষামন্ত্রী হাজির হন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে। রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী, পদত্যাগী চার বিভাগীয় প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন ডিন এবং ইংরেজির এক শিক্ষিকার সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। ইংরেজির শিক্ষিকা জয়িতা রায় এ দিন নতুন করে হেনস্থার অভিযোগ করেন। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাখানেক আলোচনার পরে বাইরে বেরিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান বঙ্কিম মণ্ডল বলেন, ‘‘এ দিন আরও কয়েক জন শিক্ষকের পদত্যাগ করার কথা ছিল। তবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। উনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন এবং আমাদের পদত্যাগপত্র তুলে নিতে অনুরোধ করেছেন। তাঁর বক্তব্যকে সম্মান জানিয়ে আমরা ইতিবাচক ভাবনাচিন্তা করছি।’’

Advertisement

বিকেলে ওই শিক্ষকেরা জানান, তাঁরা পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করছেন। রবীন্দ্রভারতী কলা শিক্ষক সংসদের সম্পাদক অধ্যাপক দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘উপাচার্যকে জানিয়ে দিয়েছি, আমরা কাজ করতে প্রস্তুত। তবে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নিলেও আমাদের যে-সব দাবি আছে (যেমন শিক্ষকদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে হবে, জাতপাত তুলে কথা বলা চলবে না ইত্যাদি), সেই বিষয়ে বুধবার উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠকে বসব।’’

আরও পডু়ন: তোলাবাজির টাকা ফেরত দিতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দিলেন তৃণমূল নেত্রী

শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার আগে বলেন, ‘‘যে-ধরনের অভিযোগ এসেছে, তা মোটেই আমাদের ঐতিহ্য বা আমাদের সংস্কৃতির শ্রীবৃদ্ধি ঘটায় না। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক কেউ অপমানিত হোন, এটা মেনে নিতে পারি না। সেই সঙ্গেই আমি জানিয়ে দিয়েছি, উপস্থিতি নিয়ে যেন কোনও রকম শিথিলতা দেখানো না-হয়। শিক্ষকদের অনুরোধ করেছি, শিক্ষকদের অনুপস্থিতি নিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যে-অভিযোগ করেছেন, সেই বিষয়েও যেন তাঁরা যথেষ্ট সচেতন হন।’’ একই সঙ্গে মন্ত্রী জানান, তিনি পড়ুয়াদের বলেছেন, শিক্ষকেরা যদি তাঁদের আচরণে ব্যথিত হন, শিক্ষকদের কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রীর কথা তাঁরা মেনে নিচ্ছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আচরণে শিক্ষকেরা ব্যথিত হলে আমরা নিশ্চয়ই তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইব। তবে আমরা আবার বলছি, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। তদন্ত কমিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। তদন্তেই আসল তথ্য উঠে আসবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন