বিরোধীর মতে লুম্পেনরাজ, নস্যাৎ করল তৃণমূল

অটোয় মহিলার শ্লীলতাহানি বা তরুণীকে ধাওয়া করার ঘটনাকে শুক্রবার ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে সাফাই দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনাগুলির প্রতিকার হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তবে সে আশ্বাসে রাজ্যের মানুষ ভরসা রাখতে পারবেন না বলেই মনে করেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:২৩
Share:

অটোয় নিগ্রহ বা তরুণীর পিছনে একদল যুবকের ধাওয়া করার ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যে আইনের শাসন নেই বলে একযোগে সরব হলেন বিরোধীরা। তৃণমূল জমানায় কলকাতা শহর তো বটেই, রাজ্যে একের পর এক মহিলা নিগ্রহে অভিযুক্তদের কার্যত শাস্তি না হওয়ায় ‘লুম্পেনরাজ’ চলছে বলেই তাদের অভিযোগ। তবে আগের অন্যান্য অনেক ঘটনার মতোই এ বারও মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগের জবাবে তৃণমূল অবশ্য একে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা বলেই ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

Advertisement

অটোয় মহিলার শ্লীলতাহানি বা তরুণীকে ধাওয়া করার ঘটনাকে শুক্রবার ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে সাফাই দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই ঘটনাগুলির প্রতিকার হবে বলে আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তবে সে আশ্বাসে রাজ্যের মানুষ ভরসা রাখতে পারবেন না বলেই মনে করেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন নেই। শিক্ষক হোন বা মহিলা, কারও কোনও নিরাপত্তা নেই। দাগি অপরাধী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত দাদারা রাজ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।’’ একই ভাবে কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী, ‘‘লুম্পেনরা বুঝে গিয়েছে, এখানে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে। শাসক দলের নেতারা যেখানে পুলিশকে হুমকি দেন, পুলিশ ভয়ে টেবিলের তলায় লুকোয়, সেখানে মহিলাদের নিরাপত্তা কে দেখবে?’’

অভিযোগ, তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে পার্ক স্ট্রিট, কাটোয়া বা কামদুনির মতো ঘটনার পরে শাসক দল তাকে ‘লঘু’ করে দেখানোর চেষ্টা করেছে। এ বার কলকাতার রাস্তায় একের পর এক মহিলা হেনস্তার ঘটনাকেও ‘বিচ্ছিন্ন’ বলে দাবি করায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘মহিলাদের উপর হিংসাত্মক আচরণ বাম জমানাতেও হত। তৃণমূল জমানায় তা আরও বেড়েছে। কারণ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইশারা ছাড়া কোনও পদক্ষেপ করার স্বাধীনতা পুলিশের নেই।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ স্বাধীন ভাবে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করলে তৃণমূল বাহিনীর দাপটে তাদের টেবিলের তলায় লুকোতে হয়। ফলে সমাজবিরোধীদের কাছে বার্তা যায় এ রাজ্যে অপরাধ করলেও ভয়ের কিছু নেই।’’

Advertisement

তৃণমূল অবশ্য বিরোধীদের এই অভিযোগ মানতে নারাজ। পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘কলকাতার থেকে নিরাপদ শহর আর কোথায়? এই ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন। এর প্রতিকার অবশ্যই হবে। তবে এই শহরের মহিলারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, এটা বলা ঠিক নয়। কারণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে মহিলা।’’

গড়িয়াগামী অটোয় মহিলা-হেনস্থার ঘটনার নিন্দা করে পার্থবাবু অটোচালকদের কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। টালিগঞ্জ-গড়িয়া রুটে অটো বন্ধ রাখার নেপথ্যে শাসক দলের প্রচ্ছন্ন মদত রয়েছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এই অভিযোগ নস্যাৎ করতে পার্থবাবু জানান, ‘‘আমাদের দলে অটো ইউনিয়ন যাঁরা দেখেন, তাঁদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। দলের সঙ্গে কথা না বলে আমাদের কোনও অটোচালক সংগঠন যখন-তখন অটো বন্ধ রাখতে যে পারবে না, তা বলে দেওয়া হয়েছে।’’

তৃণমূলের অটো ইউনিয়নের অন্তর্গত অটোচালকেরা নিজেদের ইচ্ছেমতো অটো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলে, সংশ্লিষ্ট চালকদের পারমিট বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন