যে সব সরকারি সাহায্য প্রাপ্ত স্কুল সরকারি নির্দেশ না-মেনে বেশি ফি নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক। তবে স্কুল চালানোর জন্য কর্তৃপক্ষ পড়ুয়াদের কাছ থেকে বছরে সর্বোচ্চ ২৪০ টাকা স্কুল নিতে পারেন। আর শহরাঞ্চলে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া-প্রতি বছরে ৭৫ টাকা নেওয়া যায়। গ্রামাঞ্চলে নেওয়া যায় ৬৩ টাকা। বাস্তবে ওই সব স্কুল লাইব্রেরি ফি, ল্যাবরেটরি ফি, ইলেক্ট্রিক ফি-এর মতো বেশ কিছু খাতে অতিরিক্ত টাকা নেয়।
বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু স্কুলের অভিভাবক। মধ্যমগ্রাম উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়-সহ আরও কিছু স্কুল সম্পর্কে এই অভিযোগ উঠেছে।
বেসরকারি স্কুলগুলি অতিরিক্ত ফি নেওয়ার প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই স্কুল শিক্ষা দফতর সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিকে জানায়, যারা পড়ুয়াদের কাছ থেকে সরকারের বেঁধে দেওয়া ফি-র চেয়ে বেশি নিচ্ছে, তাদের অবিলম্বে স্কুল পরিদর্শকের অফিসে গিয়ে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করতে হবে। তাতে খুব একটা কাজ হয়নি।
শনিবার এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘সরকার পোষিত বহু স্কুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি তারা সরকারি নির্দেশ মেনে কাজ করছে না। আমরা যে ফি নিতে বলেছিলাম অনেকে তার তিনগুণ ফি নিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেব।’’
ওই সব স্কুলের বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা নিতে পারে স্কুল শিক্ষা দফতর? বিকাশ ভবন সূত্রে খবর, ওই সব স্কুলের অনুমোদন বাতিল পর্যন্ত করা হতে পারে। তাদের পরিচালন সমিতি ভেঙে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারে। প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ ধরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হতে পারে কিংবা সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকের বেতনও স্থগিত করা হতে পারে।
তবে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষখই মনে করেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া ফি নিলে আর স্কুল চালানো যায় না। উত্তর ২৪ পরগনার এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘বিদ্যুতের বিল স্কুলকে মেটাতে হয়। বাইরে থেকে কম্পিউটারের শিক্ষক রাখতে হয় অনেক স্কুলকে। স্কুলের নৈশ প্রহরী, ঝাড়ুদারদের খরচও বহন করতে হয় স্কুল-কর্তৃপক্ষকেই। সেই টাকা আমরা কোথা থেকে দেব তা সরকার বলে দিক।’’ অনেক স্কুল আবার পড়ুয়াদের নামে টাকা না-নিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য নেয়।
এক প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘এ বার স্কুল চালাতে অভিভাকদের কাছে গিয়ে হাত পাততে হবে আমাদের। সরকার আমাদের সেই ভিক্ষাবৃত্তির পথেই ঠেলে দিচ্ছে।’’ প্রধান শিক্ষকদের কেউ কেউ আবার বিষয়টি নিয়ে স্কুল শিক্ষা দফতরকে বৈঠক ডাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। যেখানে তাঁরা নিজেদের বক্তব্য জানাতে পারবেন।
পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরী বলেন, ‘‘সরকারের নির্দেশ অমান্য করা কখনই উচিত নয়। আমাদের দাবি, স্কুল নিয়ম মেনে ফি নিক।’’ তা হলে স্কুলগুলি আনুষঙ্গিক সব খরচের টাকা পাবে কোথা থেকে? নীহারেন্দুবাবুর মন্তব্য, সেটা সরকারকেই বহন করতে হবে!
তবে স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তারা এ নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ।