Partha Chatterjee

Partha Chatterjee: গত তিন বছর নাকি নাকতলার পুজোয় নেই পার্থ, কমিটি কি ব্যস্ত ‘দূরত্ব’ বাড়াতে?

মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো বলেই পরিচিত নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। অথচ তিন বছর ধরে নাকি সেই পুজোয় নেই তিনি!

Advertisement

অমিত রায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২২ ১১:৩৮
Share:

মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ফাইল চিত্র

যে পুজোর ‘মুখ’ এবং মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে অধুনা গোটা রাজ্য (এবং দেশও) তোলপাড়, সেই পুজোর সঙ্গে নাকি গত তিন বছর ধরে কোনও যোগাযোগই নেই পার্থর! এসএসসি দুর্নীতির মামলায় রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী পার্থ গ্রেফতার হওয়ার পরেই বিভিন্ন মহলে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যেমন তিনি মন্ত্রী থাকবেন কি না, তিনি তৃণমূলের মহাসচিব থাকবেন কি না, তিনি তৃণমূলের মুখপত্রের সম্পাদক থাকবেন কি না। তার সঙ্গেই প্রশ্ন নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজো নিয়েও।

Advertisement

তবে পার্থর সঙ্গে ওই পুজো কমিটির কর্তারা নিজেদের জড়াতে চাইছেন না। মহানগরীর শারদোৎসবে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোকে সকলেই ‘পার্থর পুজো’ বলে জানলেও পুজো কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা অঞ্জন দাসের দাবি, ‘‘গত তিন বছর ধরে পার্থ’দা আমাদের পুজোর সঙ্গে যুক্ত নন। পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে রাজ্যের মন্ত্রীকে আমরা পুজো কমিটির চেয়ারম্যান করেছিলাম। কিন্তু তাঁর স্ত্রীর প্রয়াণের পর তিনি নিজেই ওই পদ থেকে সরে দাঁড়ান।’’

ওই পুজোর উদ্যোক্তার আরও দাবি, ‘‘অনেকে বলছেন, পার্থবাবু এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র হেফাজতে চলে যাওয়ায় আমাদের পুজোয় নাকি তার প্রভাব পড়বে। আমাদের পুজোর বয়স ৩৮ বছর। আর পার্থ’দা মন্ত্রী হয়েছেন ১১ বছর। তাই তাঁর অনুপস্থিতিতে আমাদের পুজোয় প্রভাব পড়বে বলে আমাদের পুজোর গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

Advertisement

তবে ঘটনাক্রম বলছে, ২০১১ সালে পার্থ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর ‘শ্রীবৃদ্ধি’ ঘটেছে। সেটা যাঁরা ওই পুজো নিয়মিত দেখেন বা খোঁজ রাখেন, তাঁদেরও নজর এড়ায়নি। ২০১২ সাল থেকে একের পর এক খ্যাতনামা শিল্পীদের দিয়ে নিজেদের পুজোয় মহার্ঘ থিম সাজিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কখনও ভবতোষ সুতার, কখনও সুশান্ত পালের মতো নামীদামি শিল্পীদের দিয়ে বছরের পর বছর বড় বাজেটের পুজো হয়েছে। ৬ অক্টোবর পার্থর জন্মদিন। পুজোর সময় কখনও তাঁর জন্মদিন পড়লে নাকতলার পুজোর পরিবেশেই আয়োজিত হত সেই মর্মে উৎসব। বেহালা পশ্চিমের পাঁচ বারের বিধায়ক হওয়ার সুবাদে সেখানকার কমবেশি সব শারদোৎসব কমিটিরই বড় পদে রয়েছেন পার্থ। কিন্তু নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ বরাবরই ‘পার্থর পুজো’ বলে পরিচিত।

তবে উদ্যোক্তাদের বিড়ম্বনা বাড়িয়েছেন অর্পিতা। ইডির দাবি অনুযায়ী ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতার ছবি এখনও জ্বলজ্বল করছে নাকতলার উদয়ন সঙ্ঘের পুজোর প্রচারে। যা নেটমাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে গিয়েছে গত শুক্রবার থেকে। ২০১৯ সালে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের দুর্গাপুজোর থিম ছিল ‘জন্ম’। পরের বছর ‘চুপের শব্দ বিরাট’। পরপর দু’বছরের পুজোর পোস্টার থেকে হোর্ডিং— সর্বত্রই দেখা গিয়েছে মডেল-অভিনেত্রী অর্পিতাকে। ২০২০ সালে ‘ত্রিনয়নী’ রূপে পুজোর ‘অ্যাম্বাসেডর’ ছিলেন অর্পিতা। যা নিয়ে পুজো কমিটির এক সদস্য বলছেন, ‘‘এখন থেকে বছর পাঁচেক আগে। উনি সিনেমা করেন, সেই আন্দাজে যোগাযোগ হয়েছিল। চার-পাঁচটা হোর্ডিং করা হয়েছিল। তবে সে ক্ষেত্রে কারও সুপারিশ ছিল না।’’

পুজোর কর্তাদের দাবি, তাঁদের পুজোর সঙ্গে আর কোনও ভাবেই যুক্ত নন পার্থ। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, রাজনীতির সঙ্গে ক্লাব বা পুজো কমিটিকে জড়িয়ে দেখা উচিত নয়। কারণ, উৎসব রাজনীতির ঊর্ধ্বে। পাড়ার বাসিন্দা হিসেবে ক্লাব তথা পুজো কমিটির বড় পদে জায়গা দেওয়া হয়েছিল শিল্পমন্ত্রীকে। যেমন বাম জমানায় নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ ক্লাব এবং পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন অধুনাপ্রয়াত আরএসপি নেতা তথা একদা রাজ্যের মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী।

এ বার নাকতলার পুজো সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে শিল্পী প্রদীপ দাসকে। প্রতিমা গড়ছেন পিন্টু শিকদার। গত ১ জুলাই রথযাত্রার দিন ঘটা করে খুঁটিপুজো করে পুজোর সূচনা করেছে নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, সেই অনুষ্ঠানেও পার্থ যোগ দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন