এক দিকে ‘আর্থিক অবরোধে’ উন্নয়ন স্তব্ধ, অন্য দিকে দলের কাউন্সিলরদের ভাঙানোর চেষ্টা— দুইয়ের সাঁড়াশি চাপেই তিনি শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করলেন মুর্শিদাবাদের দলত্যাগী পুরপ্রধান বিপ্লব চক্রবর্তী।
২০১৫ সালের পুরভোটে কংগ্রেস যেখানে ১০টি আসন পেয়েছিল (পরে এক বাম সমর্থিত নির্দল যোগ দেন), সেখানেই কংগ্রেসের ৯, ফরওয়ার্ড ব্লকের ১ জন এবং এক বাম সমর্থিত নির্দল সদস্য তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। কফিনে পেরেক পুঁতেছেন বিপ্লববাবু।
কেন তাঁর এই দলবদল?
বিপ্লববাবু প্রথমেই যে কারণটা দেখাচ্ছেন তা হল, তৃণমূল পরিচালিত অসহযোগিতা। তাঁর অভিযোগ, ১৬টি ওয়ার্ডেই পানীয় জল সরবরাহের জন্য কেন্দ্র জলপ্রকল্পের অনুমোদন দিলেও রাজ্যের গাফিলতিতে তা থমকে আছে। তাঁর কথায়, ‘‘গত দু’বছরে বিভিন্ন রাস্তাও বেহাল হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন পরিকল্পনা খাতে প্রায় ৯ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করে রাজ্যের কাছে পাঠিয়েও টাকা পাইনি।’’
মুর্শিদাবাদ শহরকে পর্যটন নগরী করার দাবিও পাত্তা পায়নি। বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আর্থিক অবরোধ করে রাখায় অস্থায়ী কর্মীদের বেতন আর পেনশনের টাকা দিতে পারছি না। পুরসভা চালানোই সম্ভব হচ্ছে না।’’ এই বর্ষায় বিভিন্ন রাস্তার পিচ উঠে গিয়ে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ দরজা থেকে হাজারদুয়ারি, আস্তাবল মোড় থেকে নাকুড়তলা, নসিপুর রাজবাড়ি থেকে কাঠগোলা বাগানের রাস্তা চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। মোগলটুলির ভিতর দিয়ে কাঠগোলা বাগান যাওয়ার বাইপাসেও পিচ উঠে কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে। মোতিঝিল পার্কে ঢোকার রাস্তাতেও বড় বড় গর্ত।
পুজোর আগেই রাস্তা সংস্কারের জন্য প্রকল্প করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। বিপ্লববাবুর আক্ষেপ, ‘‘পুজোর পরেই লালবাগে পর্যটনের মরসুম শুরু। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড় হতে থাকে। রাস্তা সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার নির্বিকার।’’
২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে রাস্তা সংস্কারের জন্য রাজ্য প্রায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছিল। তার মধ্যে ৬০ লক্ষ টাকা পাওয়া গেলেও বাকি অর্ধেক এখনও বকেয়া পড়ে। বিপ্লববাবুর দাবি, ‘‘তা সত্ত্বেও বিগত পুরবোর্ড প্রায় ১৫ কোটির উন্নয়নমূলক কাজ করে। ঠিকাদারদের টাকা কিন্তু এখনও মেটানো যায়নি। ফলে তাঁদের দিয়ে আর নতুন কাজও করানো যাচ্ছে না।’’ তাঁর আরও দাবি, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব আর্সেনিকমুক্ত পরিশ্রুত পানীয় জল প্রতি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দাবি মেনে নেওয়ার পরেই আমি দলবদলের জন্য লালবাগ থেকে কলকাতায় পৌঁছেছেন। তবে কংগ্রেসের একাংশের দাবি, তৃণমূল কাউন্সিলর মেহেদি আলম মির্জাকে সঙ্গে নিয়ে কাউন্সিলরদের প্রভাবিত করে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার ছক কষছিলেন মুর্শিদাবাদের কংগ্রেস বিধায়ক শাওনী সিংহ রায়। তা রুখতেই বিপ্লবাবুর তৃণমূলে যোগদান। বিপ্লববাবুর দাবি, ‘‘বিধায়ক গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং দুর্নীতিতে জড়িত। কিন্তু জেলা নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েও ফল হয়নি।’’ বিধায়ককে বারবার ফোন করা হলেও তিনি প্রথমে বলেন ‘‘বৈঠকে ব্যস্ত আছি।’’ পরে আর ফোন ধরেননি।