টোল আদায় নিয়ে জুলুম ঈশ্বর গুপ্তে

প্রায় বছর দুয়েক পর ফের টোল ট্যাক্স চালু হয়েছে ঈশ্বর গুপ্ত সেতুতে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে শুরু হয়েছে টোল আদায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৯
Share:

টোল-ট্যাক্স: নেওয়া হচ্ছে। নিজস্ব চিত্র

প্রায় বছর দুয়েক পর ফের টোল ট্যাক্স চালু হয়েছে ঈশ্বর গুপ্ত সেতুতে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে শুরু হয়েছে টোল আদায়। কিন্তু নিয়ম না মেনে বাড়তি টোলের জন্য জুলুম করার অভিযোগ উঠছে। আবার কিছু লোকজন টোল দেবেন না বলে ইচ্ছাকৃত ভাবে ঝামেলা করছেন, এই অভিযোগও উঠছে।

Advertisement

নদিয়ার কল্যাণী আর হুগলির বাঁশবেড়িয়ার মধ্যে ভাগীরথীর উপরে এই সেতুতে আগে নিয়মিত টোল নেওয়া হত। সেতুর বেহাল অবস্থার কারণে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ভারী গাড়ি চলাচল বন্ধ হওয়ার পরে আইনত টোল আদায়ও বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি তা ফের শুরু চালু হয়েছে।

ওই সেতুতে টোল আদায়ে যুক্ত গৌতম দত্ত জানান, ১৪ সেপ্টেম্বর হুগলি হাইওয়ে ডিভিশন ২-এর এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী তাঁরা টোল আদায় করছেন। তবে অনেকেরই অভিযোগ, টোল আদায়ে যুক্ত কর্মীরা গাড়ির চালক ও আরোহীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। নির্ধারিত টাকার দ্বিগুণ-চার গুণ চেয়ে জুলুম করা হচ্ছে। সম্প্রতি এমনই একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি ছোট গাড়ির চালকের কাছ থেকে এক বার ২০ টাকা, এক বার ৪০ টাকা চাওয়া হচ্ছে (যেখানে চাওয়ার কথা ১০ টাকা)। এই নিয়ে প্রশ্ন তোলায় ধমকধামক-শাসানি তো আছেই, মোবাইলে সেই ছবি তোলায় ঝাঁপিয়ে পড়ে ফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা এবং হাতাহাতিও দেখা গিয়েছে।

Advertisement

নিয়ম অনুযায়ী, ঈশ্বর গুপ্ত সেতুতে উঠতে পথচারী, দু’চাকার গাড়ি, রিকশা, ঠেলা, সরকারি গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স, অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী যানের কোনও টোল ট্যাক্স দিতে হবে না। টোটো, অটো বা মোটরটালিত রিকশার জন্য ধার্য ৫ টাকা। চার চাকার গাড়ি, ছোট মালবাহী গাড়ি বা বাসের লাগবে ১০ টাকা করে। লরি বা ট্রাক্টর গেলে দিতে হবে ৪০ টাকা। বর্তমানে ওই সেতুতে বাস, লরি বা মাল বোঝাই ট্রাক্টরের মতো ভারী গাড়ি যাওয়া নিষেধ। এক মাত্র যদি না বাড়তি টোলের লোভে পুলিশ বা টোলকর্মীরা ওই সব গাড়ি ছেড়ে দেন।

কিন্তু সব সময়ে এই নিয়ম ঠিক মতো মানা হচ্ছে না, বরং বাড়তি টাকা চেয়ে জুলুম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কেন? নাম প্রকাশ না করার শর্তে টোল আদায়ে যুক্ত এক কর্মী জানান, রোজকার সংগৃহীত টোল ট্যাক্সের উপরে ৯৫টি পরিবার নির্ভরশীল। আদায়ের পরিমাণ যা-ই হোক, তা থেকে প্রতি দিন সরকারকে ৮০ হাজার টাকা দিতেই হয়। এখন বড় গাড়ি না চলায় বেশি অঙ্কের টোল পাওয়া যায় না। তাই কর্মীদের কেউ-কেউ বেশি টাকা তোলার ঝোঁক এড়াতে পারছেন না। এঁদের বেশির ভাগই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে এলাকায় পরিচিত। তবে তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, মাঝে এত দিন টোল ট্যাক্স দিতে না হওয়ায় এখন ‘খারাপ সেতুতে কেন ট্যাক্স দেব’ প্রশ্ন তুলে কিছু লোকজন হুজ্জুতি করছেন। পুলিশের দাবি, তারা জুলুমবাজির কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ পায়নি। তাই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নও আসছে না। স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কাঁচরাপাড়া পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ সিংহ বলেন, ‘‘আগে কয়েক জন বেআইনি ভাবে টোল আদায় করত। সেটা বন্ধ করিয়েছিলাম। ফের যখন অভিযোগ উঠছে, নিশ্চয়ই দেখব।’’

হুগলি হাইওয়ে ডিভিশন ২-এর এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত কুণ্ডু বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ আমাদের কানেও এসেছিল। আমরা সঙ্গে-সঙ্গে টোল আদায়কারী সংস্থাকে সতর্ক করেছি। টোলের তালিকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি কোনও জুলুম হয়, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করুন। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন