সাগরের সেই স্কুল। —ফাইল চিত্র।
সাগরের স্কুলে অবিলম্বে দু’জন পুরো সময়ের শিক্ষিকা নিয়োগ করা হবে বলে জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কেন এত দিন তা হয়নি, তা নিয়ে মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বলেও শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর।
শুক্রবার সংবাদমাধ্যমে খবরটি জেনে স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী। ওই স্কুলের একমাত্র স্থায়ী শিক্ষিকা বদলি চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন, স্কুলটি শিক্ষিকাহীন হয়ে পড়েছে— এ সব বিষয় কেন তাঁকে জানানো হয়নি, তা নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেন তিনি। তবে সাগর ব্লকের মৃত্যুঞ্জয়নগর বালিকা বিদ্যানিকেতন যাঁর দানের জমিতে তৈরি হয়েছিল, সেই সরোজকুমার মণ্ডলের দাবি, গত বছর ১৬ অক্টোবর তিনি নিজে নবান্নে শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে গিয়ে স্কুলের অবস্থা জানিয়ে চিঠি দিয়ে এসেছিলেন।
এখনের একমাত্র পুরো সময়ের শিক্ষিকা আলোলিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই স্কুলে যোগ দেন ২০১১ সালে। থাকেন কলকাতার হালতুতে। সেখান থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার ঠেঙিয়ে সাগরের স্কুলে যেতে হয়রান হচ্ছিলেন তিনি। বদলি চেয়ে আবেদন করেন। এসএসসি তাঁকে বদলিও করে। কিন্তু ‘রিলিজ অর্ডার’ দিতে চাননি স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি অজিতকুমার সাহু। এমনকি আদালতের নির্দেশেও তিনি এ কাজ করতে পারবেন না বলে জানান অজিত। প্রয়োজনে জেলে যেতেও তাঁর আপত্তি নেই বলে জানান তিনি।
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা স্কুল পরিদর্শকের কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন পরিচালন সমিতির সভাপতি অজিতকুমারকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। পরিদর্শক তাঁকে জানান, আপাতত স্থায়ী পদমর্যাদার দুই শিক্ষিকাকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দিন সাতেকের মধ্যে তাঁরা কাজে যোগ দেবেন। এ দিনই স্কুলে এসেছিলেন সাগরের এসআই নাসিরুদ্দিন মিস্ত্রি। সকলের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিধায়ক বঙ্কিম হাজরাও। বৃহস্পতিবারই অভিভাবকদের নিয়ে স্কুলে বৈঠক করেছেন তিনি। পরে অজিত বলেন, ‘‘জেলা স্কুল পরিদর্শক আশ্বাস দিয়েছেন, কয়েক জন শিক্ষিকা পাঠানো হবে।’’
স্কুলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ১৯৭৬ সালে তৈরি হয়েছিল এই স্কুল। ক্রমে কলেবরে বাড়ে স্কুলটি। ১৯৮১ সালে মাধ্যমিক স্তরের মনোনয়ন পায়। সাড়ে তিনশোর বেশি ছাত্রী ছিল সে সময়ে। ১১ জন শিক্ষিকা এবং অশিক্ষক কর্মী ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একে একে অবসর নিতে থাকেন সকলে। ২০১১ সালে আসেন আলোলিকা। ২০১৪ সালে আরও এক শিক্ষিকাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি বছর দেড়েকের মাথায় বদলি নিয়ে চলে যান।
এই পরিস্থিতিতে ক্রমশ কমতে থাকে পড়ুয়ার সংখ্যা। বর্তমানে ছাত্রী সংখ্যা ৮৩। নানা তহবিল থেকে কয়েক জনকে অস্থায়ী ভাবে পড়ানোর কাজে লাগানো হয়। তাঁদেরই মধ্যে সুস্মিতা কর্মকার, ববিতা নায়েক, রুম্পা গোল বলেন, ‘‘আমরা কোনও মতে পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছি। কিন্তু সামান্য টাকা পাই। এ ভাবে আমাদেরও অসুবিধা।’’ একমাত্র পার্শ্বশিক্ষিকা প্রণতিরানি জানা বেরা জানান, সাধ্য মতো স্কুল চালানোর চেষ্টা করেন সকলে।
স্কুলের দোতলায় হস্টেল। সেখানে থাকে সুস্মিতা মাইতি, শম্পা দাস, পার্বতী মান্ডি। মাধ্যমিক দেবে এ বার। ওই ছাত্রীদের কথায়, ‘‘পুরো সময়ের দিদিমনি না থাকায় পড়াশোনায় সমস্যা হয়েছে। তবু যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সাহায্য করেছেন। কিন্তু শুনছি পুরো সময়ের দিদিমনি না থাকলে পরীক্ষায় বসাই মুশকিল হয়ে যাবে। সকলে চিন্তায় আছি।’’