প্রতীকী ছবি
গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলিকে কড়া নিয়মে বাঁধতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই সরকারই আবার দেশের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলিকে ফোনে ও কম্পিউটারে নজরদারির ঢালাও ছাড়পত্র দিচ্ছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তার ক্ষেত্রে দেশের সরকার কি দু’মুখো নীতি নিচ্ছে না?
সরকারের তরফে অবশ্য বলা হচ্ছে, দেশের নিরাপত্তার খাতিরেই এই ছাড়পত্র। আইনেও তার স্বীক়ৃতি রয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ভোটের আগেই এই নির্দেশিকা কেন? নেহাতই নিরাপত্তার জন্য, নাকি এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি? রাজ্য পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে কী করা উচিত, সম্প্রতি সেই ব্যাপারে মতামত চেয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু সেই সময় কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে এই ছাড়পত্র দেওয়ার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি।
১৮৮৫ সালের ভারতীয় টেলিগ্রাফ আইনের ৫(২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতি বা জনগণের নিরাপত্তার খাতিরে টেলি-বার্তায় আড়িপাতার ক্ষমতা রয়েছে সরকারি কর্তাদের। কিন্তু ব্রিটিশদের তৈরি সেই আইনে সংবাদমাধ্যমের টেলি-যোগাযোগে আড়িপাতার উপরে আরও কিছু বিধিনিষেধ ছিল। ‘‘দেশের নিরাপত্তার খাতিরে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া আইনসঙ্গত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য সুরক্ষা নীতিতেও জাতীয় নিরাপত্তাকে ছাড় দেওয়া আছে,’’ বলছেন এথিক্যাল হ্যাকিং বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত।
সাইবার আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, এই ধরনের ঢালাও নজরদারির দরুন গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কারণ, নিরাপত্তার খাতিরে নজরদারি প্রয়োজন। কিন্তু সেটা লাগামছাড়া হলে অপপ্রয়োগের আশঙ্কাও বাড়ে। বিভাসবাবু বলছেন, ‘‘আমেরিকায় কারও ল্যাপটপ তল্লাশির জন্যও আদালতের সমনের প্রয়োজন হয়। আসলে নিরাপত্তা ও নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার মধ্যে ভারসাম্য রাখা প্রয়োজন।’’ সাইবার বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ইনফোসেক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুশোভন মুখোপাধ্যায়ও বলছেন, ‘‘ছাড়পত্র আইনি হতেই পারে। কিন্তু তার প্রয়োগ কী ভাবে হচ্ছে, সেটাই আসল বিষয়।’’
আড়িপাতা বা নজরদারির প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রে যে রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন পুলিশকর্তাদের একাংশও। তাঁদের এক জন জানাচ্ছেন, বিজেপি-বিরোধী এক নেত্রী বিরোধী দলে থাকার সময় আড়িপাতা নিয়ে তোলপাড় করতেন, এক পুলিশকর্তাকে কার্যত কাঠগ়়ড়ায় দাঁড় করাতেন। অথচ
ক্ষমতার হাতবদলের পরে সেই অফিসারই নেত্রীর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। তিনি যে এখন শাসকের হয়ে আড়ি পাতেন না, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?