যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিই, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ (স্বর্ণপদক), কানপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি সুজয় বিশ্বাস ‘টেকনো ইন্ডিয়া’ গোষ্ঠীর ডিরেক্টর এবং সিইও। ইঞ্জিনিয়ারিং পাঠক্রম নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন অশোক সেনগুপ্ত।
এই মুহূর্তে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য মাথা ঘামাচ্ছে অজস্র পড়ুয়া। ওরা অনেকে জানতে চায় ‘কোর’ না আইটি— কোনটা ভাল, কেন?
চটজলদি চাকরির জন্য আইটি ভাল। কিন্তু ভিত তৈরির জন্য ‘কোর’। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কোর বিষয়গুলির একটা অন্য রকম গুরুত্ব আছে। রতন টাটা বলেছেন ‘ট্রাই টু বি ডিফারেন্ট’। এপিজে আবদুল কালাম বলেছেন, ‘ট্রাই টু বি ইউনিক’।এই স্বপ্ন রূপায়িত করতে গেলে কেবল আইটি-তে হবে না। এটা হয়তো ঠিক, তুলনামূলক ভাবে শুরুর দিকে ‘কোরের’ তুলনায় আইটি-র কাজে বেতন ভাল। কিন্তু ‘কোর’-এ স্থায়ীত্ব বেশি। সুযোগ থাকে নতুন কিছু করার, ভাবার, গবেষণার।
আইটি-র হরেক স্পেশালাইজেশন। কোনটা ভাল, কেন?
আপাতদৃষ্টিতে কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রনিক্স, আইটি, ইন্সট্রুমেন্টেশন— চাহিদার পর্যায়টা এভাবে সাজাতে পারেন। কিন্তু, এটা বাস্তবে অনেক সময় খাটে না। কে, কোথা থেকে পাশ করছে— সেটা নিয়োগকর্তাদের কাছে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিষ্ঠান না স্পেশালাইজেশন— কোনটার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত?
আমি তো বলব প্রতিষ্ঠানটা খুব বড় বিচার্য বিষয়। একটা ছেলে বা মেয়ে চার বছরের শিক্ষার পর ৩৫-৪০ বছর চাকরি করবে। তার এই শিক্ষার ভিতটা যদি শক্ত না হয়, ভবিষ্যতকে কী ভাবে নিশ্চিত করবে? তাছাড়া ভাল প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পাসিং ভাল হয়। উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি, ফি বছর টেকনো গোষ্ঠীর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বি টেক কলেজগুলির প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীর ৮৫ শতাংশ হয়তো ক্যাম্পাসিংয়ে কাজ পেয়ে যাচ্ছেন। সেখানে টেকনো সল্টলেকের অন্তত ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসিংয়ে কাজ পাচ্ছেন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠান ভাল হলেই কী শেখার ভিত শক্ত হবে?
ভাল প্রতিষ্ঠানে ভাল শিক্ষাগত যোগ্যতার ছেলেমেয়েরা আসবে। নিজেদের সঙ্গে নিরন্তর প্রতিযোগিতায় ওদের একটা উন্নতি আসতে বাধ্য। এ ছাড়া, ভাল প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা, শিক্ষক, পরিকাঠামো— এ সবই ভাল। এর সুফলটাও সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া পাবে। উদাহরণ হিসাবে বলছি, ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্টের সময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা ৯০ জন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের ৭০ জন ভাল আইটি সংস্থায় ডাক পান। কারণ, কোন শাখার ছাত্র, তার চেয়েও বড় বিষয়, কোথাকার ছাত্র।
ইঞ্জিনিয়ারিং-এ চাকরির বাজার পাঁচ বছর আগে যতটা ছিল, এখন তার কতটা বদল হয়েছে? বছর পাঁচ বাদে চিত্রটা কতটা বদলাতে পারে?
পাঁচ বছর আগে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা অনেক সাধারণ মানের ছাত্রও কাজ পেয়েছে। এখন বাজার একটু শক্ত। তবে, দেশ বলুন বা রাজ্য— যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, টিঁকে থাকতে হলে শিল্প আনতে হবে। আর শিল্প এলে ইঞ্জিনিয়ারিং-এ কাজের বাজার ভাল হবে এদেশেও।
হবু বা নবীন ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিশেষ কোনও পরামর্শ?
গোড়া থেকে নিজেকে তৈরি করতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াদের অনেকে ঠিকমতো পড়াশোনা করে না। হয়তো ভাবে, খেটে কী হবে? আইটি-র কোনও কোম্পানিতে ঠিক কাজ হয়ে যাবে! ফলে, অনেক সময় ক্রমেই ক্লাসের পাঠক্রমে সে পিছিয়ে যায়। কিন্তু আইটিতে-ও ভাল ‘কোডিং’ মানে ‘ল্যাঙ্গোয়েজ’ বা ‘ডিজাইনিং’ ভাল ভাবে রপ্ত করার জন্য ‘প্রোগ্রাম ডেভলপমেন্ট’ শিখতে হবে মন দিয়ে। আর কেবল আইটি-র কাজের কথা ভাবলে চলবে না। ‘নবরত্ন কোম্পানি’, অধিগৃহীত সংস্থা, প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা সরকারি নানা দফতরে প্রতি বছর প্রচুর ইঞ্জিনিয়ার নেয়। উচ্চশিক্ষার জন্য কেবল স্নাতক পরীক্ষায় নয়, ‘গেট’ পরীক্ষায় ভাল ফল করতে হবে। তার জন্য দ্বিতীয় বর্ষ থেকে নিতে হবে মানসিক প্রস্তুতি। নিষ্ঠার সঙ্গে তৈরি হলে জীবনে কোন দরজা, কখন-কী ভাবে খুলবে, কেউ ভাবতেও পারে না।