পাহাড়: এ ভাবেই জমছে খুচরো। —নিজস্ব চিত্র।
নোট বাতিলের জেরে ভোগান্তির রেশ কাটতে না কাটতে এ বার খুচরো নিয়ে জেরবার সাধারণ মানুষ।
বছর দুই আগেও খুচরোর আকালের জেরে ঝগড়াঝাঁটি, হাতাহাতিও কম হয়নি শহর জুড়ে। এখন আবার বাজার ছেয়েছে খুচরোয়। এক, দুই, পাঁচ, দশ টাকার কয়েনে ঝনঝন করছে সকলের পকেট, টাকার ব্যাগ। অটো-বাস, বাজার— যে সব জায়গায় এক কালে খুচরো না দিতে পারলেই যখন-তখন জুটত বিনামূল্যের অপমান, এখন আবার খুচরো ধরাতে গেলেই হচ্ছে সেই হাল।
খুচরো বেশি জমে গেলে তার বদলে নোট মিলছে না। এই সমস্যা কেবল উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তের নয়, দুর্ভোগে পড়ছেন ভিক্ষুকেরাও। রোজের এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তাঁদেরই একাংশ।
কাঞ্চন রুইদাস নামে এক ব্যক্তি জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে। শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। তাঁর আইনজীবী জানান, মামলার আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও ব্যাঙ্ক ভিক্ষালব্ধ খুচরো টাকা জমা নিচ্ছে না। খুচরোর সামলাতে হিমসিম খাচ্ছেন ভিক্ষুকদের বড় একটি অংশ। ভিক্ষের ঝুলিতে জমা হওয়া খুচরো ডাঁই হয়ে জমছে। তার বদলে বড় অঙ্কের নোট চাইলে মিলছে না মোটেও। এর জেরে সমস্যা এতটাই বেড়েছে যে ফুটপাথের ছাউনিতে এখন তাঁদের লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে সেই খুচরো। চোরেদের নজর এড়িয়ে খুচরো বাঁচানো দায় হয়ে পড়েছে তাঁদের। পুলিশও খুচরো পাহারার দায় নিচ্ছে না। তাই তাঁরা চাইছেন, আদালত এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করুক।
মামলা করেই ক্ষান্ত থাকেননি কাঞ্চনবাবু। এই মামলায় তিনি যুক্ত করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ককেও। এ দিনের শুনানিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইনজীবী জানান, সব ব্যাঙ্ককে খুচরো নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই নির্দেশ মানাও হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই আইনজীবী আদালতে পাল্টা দাবি করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত কোনও ব্যাঙ্ক খুচরো নিতে চাইছে না, খুচরোর বদলে বড় নোট দিচ্ছে না, আদালত মামলার আবেদনকারীর কাছে তা জানতে চাইলে ভাল হয়। ওই আইনজীবী এও জানান, প্রায় এক ধরনের একটি মামলায় দিন কয়েক আগে হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছেন, অবিলম্বে খুচরো নিয়ে গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে। সেই ব্যাঙ্ক বিচারপতি বসাকের নির্দেশ মেনেছে বলেও জানান রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই আইনজীবী।
তা শুনে বিচারপতি মাত্রে ও ডিভিশন বেঞ্চের অন্য বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী কাঞ্চনবাবুর আইনজীবীর কাছে জানতে চান, কোন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে তাঁর মক্কেলের। আইনজীবী জানান, কোনও ব্যাঙ্কই খুচরো নিচ্ছে না। আলাদা করে কোনও ব্যাঙ্কের নাম তিনি বলবেন না। ডিভিশন বেঞ্চ আইনজীবীর কাছে জানতে চান, খুচরো না নেওয়ায় তিনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে মামলায় যুক্ত করেছেন। কিন্তু অন্য কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে মামলায় যুক্ত করেননি। ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, এই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। নির্দিষ্ট ভাবে কোনও ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে, তা জানিয়ে সেই ব্যাঙ্ককে মামলায় যুক্ত করে নিয়ম মেনে পুনরায় মামলা করতে হবে।