‘ও কে গান গেয়ে গেয়ে চলে যায়...’ 

ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দ্বিতীয় গানে অতুলপ্রসাদ থেকে চলে গেলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কাছে। তিনি ধরলেন ‘ও কে গান গেয়ে গেয়ে চলে যায় পথে পথে ওই নদিয়ায়...’।

Advertisement

জয় গোস্বামী

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৫৫
Share:

গানে-গানে: মঞ্চে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।

আজ আনন্দ পুরস্কারের সন্ধ্যাটি মনোরম সুরে ভরে উঠল। গান গাইলেন শ্রীমতী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর গাওয়া প্রথম গানটি ছিল, ‘পাগলা মনটারে তুই বাঁধ...’। অতুলপ্রসাদ সেন রচিত এবং ভৈরবী রাগে আশ্রিত এই গানটির দ্বিতীয় লাইনে এসে আমাদের চমক লাগে। দ্বিতীয় লাইনটি হল, ‘কেন রে তুই যেথা সেথা পরিস প্রাণে ফাঁদ...’। এখানে কি গীত রচয়িতা বারবার প্রেমে পড়ে যাওয়ার স্বভাবের প্রতি কোনও ইঙ্গিত দিলেন? গানটির করুণ মধুর রূপ আমাদের আবিষ্ট করে। এই গান রেণুকা দাশগুপ্তের রেকর্ডে এবং গীতা ঘটকের রেকর্ডেও পাওয়া যায়। গীতা ঘটকের গানে যদি অপূর্ব নাটকীয়তা পরিস্ফুট হয়ে থাকে, তা হলে রেণুকা দাশগুপ্তের উদাত্ত গানে ফুটে উঠেছে প্রাণের আর্তি। এই ধরনের গান আজকের দিনে কারও গলায় শুনতে গেলে অবধারিত ভাবে তাঁর শ্রুতকীর্তি পূর্বসূরিদের গায়নরীতি মনে আসবেই।

Advertisement

ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দ্বিতীয় গানে অতুলপ্রসাদ থেকে চলে গেলেন দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কাছে। তিনি ধরলেন ‘ও কে গান গেয়ে গেয়ে চলে যায় পথে পথে ওই নদিয়ায়...’। সম্পূর্ণ কীর্তনাঙ্গ গান এটি। বিপ্লব মণ্ডলের শ্রীখোল বাদ্যের সুন্দর সহায়তায় গান জমে উঠল মুহূর্তে। আমার মনে পড়ল কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের গাওয়া এই বিশেষ গানটির কথা। আবার দ্বিজেন্দ্রপুত্র দিলীপকুমার রায়ও এই গানটি গেয়েছেন। তবে দিলীপকুমার রায়ের গাওয়া গানটি আর কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের গাওয়া গানটি কথার দিক থেকে হুবহু এক নয়। দিলীপকুমার রায় ‘ও কি দেবতা ভিখারি মানব দুয়ারে...’ — এই অংশে এসে ‘নররূপ ধরে এসেছে নাকি’— এই কথাটি যোগ করেছেন কীর্তনে আখর যোগ করার মতো। ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, আমার মনে হল, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের গায়নরূপটিই অনুসরণ করলেন। এই গানে ‘নদিয়া’ কথাটি আছে। শ্রীগৌরাঙ্গদেব যখন গান গেয়ে নগর পরিক্রমায় বেরোতেন, তাঁর সঙ্গে যোগ দিতেন দলে দলে পুরবাসীগণ। সেই সময়কার কথাই বলা হয়েছে গানটিতে। এই গান এক উদার আহ্বানে সমস্ত শ্রোতাকে আত্মস্থ করে নিল।

এই সন্ধ্যায় ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ নিবেদিত গানটি হল ‘না সজনী না...’। গানটি রবীন্দ্রনাথের লেখা। তবে গীতমালা বইয়ে উল্লেখিত আছে যে, এর সুরারোপ করেন জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর। এই গানের স্বরলিপিও জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই করা। এই গানটির চলনের মধ্যে একটি ঠমক আছে। ঠমকটি আজকের গায়িকা সযত্নে রক্ষা করতে পেরেছেন। এই গানটি শুনতে গিয়ে মায়া সেনের গাওয়া রেকর্ডটির কথা আমার মনে পড়ল। যেমন ‘ও কে গান গেয়ে গেয়ে চলে যায়...’ গানটি শুনতে গিয়ে আমার কৃষ্ণচন্দ্র দে-র গাওয়া ‘ও দিকে নিমাই চলে মুখে হরি হরি বলে...’ গানটির কথাও মনে পড়ছিল। ‘নদিয়া’ শব্দটি কৃষ্ণচন্দ্র দে-র গানেও আছে। ওই যে বললাম, এই ধরনের গান শুনতে গেলে পূর্বসূরিদের গায়নরীতি মনে আসবেই। মিশ্র আশাবরীতে বাঁধা ‘না সজনী না...’ গানের আহত বেদনা ও অভিমান ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবেশনায় যথাযথ রূপে প্রকাশ পেয়েছিল।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এই তিনটি গানে ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সুরেলা ও খোলা আওয়াজে শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দিলেন। আনন্দ সন্ধ্যাটি সুরে সুরে আমোদিত হয়ে উঠল।

(অনুলিখন: সুচন্দ্রা ঘটক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন