পাচারের সোনা ভাগাভাগি করে নিতেন ধৃত পুলিশ ও সেনা কর্তারা!

পাচারকারীদের থেকে উদ্ধার করা সোনা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন জয়গাঁর এসডিপিও অনিরুদ্ধ ঠাকুর৷

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:০৬
Share:

আলিপুরদুয়ার কোর্ট চত্বরে জয়গাঁর এসডিপিও অনিরুদ্ধ ঠাকুর। —নিজস্ব চিত্র

পাচারকারীদের থেকে উদ্ধার করা সোনা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগির অভিযোগে গ্রেফতার হলেন জয়গাঁর এসডিপিও অনিরুদ্ধ ঠাকুর৷ তাঁর সঙ্গেই গ্রেফতার হয়েছেন আরও দুই পুলিশ অফিসার, সেনা গোয়েন্দা বিভাগের এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও এক কনস্টেবল৷ শুক্রবার গভীর রাতে ওই ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরে ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি৷ শনিবার ধৃতদের আলিপুরদুয়ার আদালতে তোলা হলে বিচারক চার দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন৷

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনার সূত্রপাত ১০ সেপ্টেম্বর৷ হাসিমারা ফাঁড়িতে দুই ব্যক্তি গিয়ে জানান, তাঁদের গাড়ি ছিনতাই হয়েছে৷ এর পরে পুলিশের টহলদার দল তোর্সা সেতুর কাছ থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে ফাঁড়িতে নিয়ে আসে৷ কিন্তু সেই গাড়ির সঙ্গে থাকা সেনা গোয়েন্দা বিভাগের দুই কর্মী, হাসিমারা সেনা গোয়েন্দা বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পবন ব্রহ্ম ও কনস্টেবল দশরথ সিংহ জানান, গাড়িটিতে বেআইনিভাবে কিছু জিনিস নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ তাই তাঁরা গাড়িটি আটকেছেন৷

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, এর কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে পৌঁছন জয়গাঁর এসডিপিও অনিরুদ্ধ ঠাকুর৷

Advertisement

আরও পড়ুন: এক বছরে মাঝেরহাটে নতুন সেতু! এত কম সময়ে গড়া কি সম্ভব?

ফাঁড়িতে তখন ছিলেন হাসিমারা ফাঁড়ির ওসি কমলেন্দ্র নারায়ণ ও সাব ইন্সপেক্টর সত্যেন্দ্রনাথ রায়৷ গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২৫টি সোনার বার উদ্ধার হয়, যার প্রতিটির ওজন এক কেজি করে। যদিও সিআইডির স্পেশ্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট ডেভিড ইভন লেপচা জানিয়েছেন, ‘‘গাড়িতে কত পরিমাণ সোনার বার ছিল, তা এখনও স্পষ্ট নয়৷’’

অভিযোগ, সোনার বারের বৈধ কাগজ নেই, এই কথা বলে পুলিশ আধিকারিকরা ওই দুই ব্যক্তির কাছ থেকে মোটা টাকা দাবি করেন৷ তদন্তকারীদের সন্দেহ, চাহিদা মতো টাকা দিতে না পারায় তাঁদের থেকে ১৫টি সোনার বার নিয়ে ওই পাঁচ জন নিজেদের মধ্যে তা ভাগাভাগি করেন। বাকি সোনা ও গাড়ি-সহ দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷

পুলিশ সূত্রের খবর, সোনার ভাগ কম-বেশি হওয়া নিয়ে কোনও এক জন অসন্তুষ্ট হন। তিনি এক সহকর্মীকে অসন্তোষের কথা জানান৷ এ ভাবেই পাঁচকান হয়ে অভিযোগ পৌঁছয় জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের কাছে। এর মধ্যে হাসিমারা ফাঁড়ি থেকে বারোবিশা ফাঁড়িতে বদলি করা হয় কমলেন্দুকে৷

শুক্রবার সন্ধ্যায় হাসিমারা ফাঁড়িতে ডেকে পাঠানো হয় এসডিপিও, ওই দুই পুলিশ আধিকারিক, সেনা গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিক ও কর্মীকে৷ আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব ও উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার রাতেই ফাঁড়িতে পৌঁছন৷ এসপি বলেন, “টানা জেরার পরে রাতেই অভিযুক্তদের থেকে ১৫টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়৷ তার পরেই তাঁদের গ্রেফতার করা হয়৷” আইজি জানান, সিআইডিকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে৷

এ দিন অভিযুক্তদের পক্ষের অন্যতম আইনজীবী তুষার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দায়ের করা অভিযোগ দেখে মনে হচ্ছে, গল্পের গরুকে গাছে তোলা হচ্ছে৷ অভিযোগ যে মিথ্যা, তা প্রমাণ করে দেব৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন