Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এক বছরে মাঝেরহাটে নতুন সেতু! এত কম সময়ে গড়া কি সম্ভব?

পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের বড় অংশের মতে, সাধারণ নিয়ম মেনে টেন্ডার ডেকে সেতু গড়তে গেলে এই সময়সীমা মেনে চলা সম্ভব নয়। কারণ টেন্ডার প্রক্রিয়াতেই ৭-৮ মাস সময় চলে যায়। তার পর ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া, অর্থ বরাদ্দ করতে আরও সময় লাগে।

ভেঙে পড়া ব্রিজ। —ফাইল চিত্র।

ভেঙে পড়া ব্রিজ। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:১৭
Share: Save:

মাঝেরহাটের ভাঙা সেতু পুরোপুরি ভেঙে ফেলে এক বছরের মধ্যে নতুন সেতু গড়া হবে বলে শুক্রবার নবান্নে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় মাপের কাজ এত কম সময়ের মধ্যে করা সম্ভব কি না?

পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের বড় অংশের মতে, সাধারণ নিয়ম মেনে টেন্ডার ডেকে সেতু গড়তে গেলে এই সময়সীমা মেনে চলা সম্ভব নয়। কারণ টেন্ডার প্রক্রিয়াতেই ৭-৮ মাস সময় চলে যায়। তার পর ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া, অর্থ বরাদ্দ করতে আরও সময় লাগে। উল্লেখ্য, মাঝেরহাট সেতুর সংস্কারের টেন্ডার পর্ব শেষ করতেই ৭ মাস লেগেছিল। এর পরে সেই ফাইল ৫ মাস অর্থ দফতরে পড়ে থাকলেও ওয়ার্ক অর্ডার বার হয়নি। তার মাঝেই ভেঙে পড়ে সেতু।

রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ সূত্র জানাচ্ছে, টেন্ডার পর্ব এড়াতে পূর্ত দফতরের তত্ত্বাবধানেই কী ভাবে সেতু নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা চলছে। যার একটা পথ হতে পারে উপদেষ্টা সংস্থার সাহায্য নিয়ে নকশা তৈরি করা, তার পর মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে দেশের কোনও বিখ্যাত সেতু নির্মাণকারী সংস্থাকে ‘টার্ন কি’ পদ্ধতিতে কাজের দায়িত্ব দেওয়া। সে ক্ষেত্রে, মন্ত্রিসভা ‘ওয়ার্ক ডান, এস্টিমেট’ (অর্থাৎ, কাজ করে টাকা নেওয়া) প্রথায় কাজের ভার দিয়ে দিতে পারে। তা হলে আর আলাদা করে টেন্ডার করতে হবে না।

আরও পড়ুন: এক বছরে মাঝেরহাটে নতুন সেতু! এত কম সময়ে গড়া কি সম্ভব?

নবান্নের আর এক কর্তা আবার জানাচ্ছেন, পূর্ত দফতরকেই পুরো কাজের দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে। তারা প্রয়োজনে রাজ্যের অধীনস্থ নির্মাণ সংস্থা ম্যাকিনটশ বার্ন-এর সহযোগিতা বা অন্য কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থার থেকে আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ভাড়া নিতে পারে। কিন্তু মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটি যার ‘গাফিলতি’কে সেতু ভাঙার জন্য দায়ী করেছে, সেই দফতরকেই কেন নতুন সেতু তৈরির ভার দেওয়া হবে, এই প্রশ্ন উঠেছে। এমন বড মাপের সেতু তৈরির ক্ষমতা এখন আর পূর্ত দফতরের আছে কি না, সেটাও প্রশ্ন। ম্যাকিনটশ বার্ন অবশ্য রাজ্যে বেশ কিছু সেতু তৈরি করেছে। কিন্তু তাদের তৈরি উল্টোডাঙা সেতু ২০১৩ সালে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে। তখনই তাদের কাজের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

তার থেকেও বড় প্রশ্ন হল, এক বছরের মধ্যে পুরনো সেতু ভেঙে নতুন সেতু তৈরি সম্ভব কি না? বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সেটা কার্যত অসম্ভব। কারণ, প্রায় ৪৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের উড়ালপুলের সার্বিক মেরামতির জন্যই কমপক্ষে ৩-৪ মাস লাগে।

কলকাতা পুরসভার নগর পরিকল্পনা দফতরের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল ও বর্তমানে শিবপুর আইআইইসটি’র ‘আরবান ইনফ্রাস্ট্রাকচার’-এর শিক্ষক দীপঙ্কর সিংহ বলেন, ‘‘পূর্ত দফতর এত অল্প সময়সীমার মধ্যে কি এই দৈর্ঘ্যের উড়ালপুল সম্পূর্ণ নতুন ভাবে তৈরি করেছে! তা হলে তো সেটাই একটা মডেল হতে পারে।’’

আর এক উড়ালপুল বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘মাটি পরীক্ষা, টেস্ট পাইলিং করতেই তো কমপক্ষে দু’মাস লাগবে। তার পর পরীক্ষামূলক ভাবে ভার বহন করে দেখা হবে। তবে তো নকশা হবে! সব কিছু ঠিক ভাবে করলে তো এক বছরের মধ্যে সম্ভব হবে না।’’ তা ছাড়া, মাঝেরহাট সেতুর নীচে রেল লাইন আছে। ফলে রেলের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতেও সময় লাগবে।

যদিও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের শিক্ষক গোকুল মণ্ডল বলেন, ‘‘এত অল্প সময়ে এই দৈর্ঘ্যের উড়ালপুল তৈরির উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ে নেই ঠিকই। কিন্তু যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করলে অবশ্যই করা সম্ভব।’’

সরকারি নির্দেশে দ্রুত কাজ করতে গিয়ে নির্মাণ ঠিক ভাবে হবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ী অনেকে। এক সেতু বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘একটা উড়ালপুল তৈরি করলেই তো হবে না। সেটা যাতে পাকাপোক্ত হয়, সেটাও তো দেখতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE