পাকড়াও ‘ভুয়ো’ এসআই

এক অফিসার কথা বলতে এগিয়ে এসেছিলেন। মহিলা নিজের পরিচয় দিলেন, ‘‘আমি মিনাখাঁ থানার এসআই।’’ কথাবার্তা এগোচ্ছিল। কিন্তু কোথাও খটকা লাগে অফিসারের। তিনি আগে ছিলেন মিনাখাঁ থানায়। কথায় কথায় জানতে চান, ‘‘এখন ওখানে ওসি কে আছেন?’’

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০১৭ ০৩:১০
Share:

অনিমা বাউড়ি

শ্লীলতাহানির মামলা ঠুকেছিলেন বছর দু’য়েক আগে। ‘কেস’টা কী অবস্থায় আছে দেখতে শনিবার দুপুরে বসিরহাট থানা চত্বরে আসেন বছর চল্লিশের এক মহিলা। পরনে খাকি ট্রাউজার্স, টি-শার্ট। চেহারা-ছবিতে জাঁদরেল ভাব।

Advertisement

এক অফিসার কথা বলতে এগিয়ে এসেছিলেন। মহিলা নিজের পরিচয় দিলেন, ‘‘আমি মিনাখাঁ থানার এসআই।’’ কথাবার্তা এগোচ্ছিল। কিন্তু কোথাও খটকা লাগে অফিসারের। তিনি আগে ছিলেন মিনাখাঁ থানায়। কথায় কথায় জানতে চান, ‘‘এখন ওখানে ওসি কে আছেন?’’

সামান্য প্রশ্ন। কিন্তু মহিলার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। আমতা আমতা করে বললেন, ‘‘নামটা মনে আসছে না। নতুন এসেছেন থানায়, এখনও পরিচয় হয়নি ঠিক মতো।’’

Advertisement

কথা ঘুরিয়ে নেন অফিসার। কিন্তু মহিলাকে বসতে বলে ঘটনাটা জানিয়ে আসেন আইসি বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ফিরে এসে দেখেন, মহিলা ততক্ষণে থানা ছেড়েছেন।

পুলিশ পিছু নেয়। দেখা যায়, বসিরহাট স্টেশনের কাছে একটি তিনতলা বাড়িতে ঢুকে গেলেন মহিলা। থাকেন দোতলায়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে কড়া নাড়ে পুলিশ। দরজা খুলে দেন ওই মহিলাই। তখন তাঁর পরনে দুই তারা লাগানো পুলিশের উর্দি। কোমরে ঝুলছে রিভলভার। মহিলাকে বলা হয়, তাঁর দায়ের করা কেসের ব্যাপারে আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানায় যেতে হবে।

থানায় টানা জেরায় মহিলা ভেঙে পড়েন। জানান, পুলিশের ভেক ধরে ঘুরে বেড়ান তিনি। লোকজনের কাছে টাকা তোলেন নানা অছিলায়। পুলিশ গ্রেফতার করেছে অনিমা বাউড়ি নামে ওই মহিলাকে। তাঁর স্বামী বিধানের নামে পুলিশের খাতায় নানা অভিযোগ আছে বলে জানা যাচ্ছে। তাঁকেও জেরা করা হচ্ছে।

অনিমার হালহকিকত জানতে গিয়ে পুলিশ কর্তারা তাজ্জব।

পাড়া-পড়শিরা জানিয়েছেন, রোজ সকালে ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়ি এসে দাঁড়াত অনিমার বাড়ির সামনে। ভিতরে দু’তিনজন থাকত। ‘ম্যাডাম’ উর্দি পরে, কোমরে রিভলভার গুঁজে বেরিয়ে পড়তেন। ওই পোশাক অনিমা কিনেছিলেন ব্যারাকপুর থেকে। রিভলভারটা অবশ্য নেহাতই খেলনা। ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়ি তাঁকে কে ভাড়ায় দিত, তা খোঁজ করছে পুলিশ।

পুলিশ সেজে কী কাণ্ডটা করে বেড়াতেন ওই মহিলা? এলাকায় খোঁজখবর করতে নেমে বহু তথ্য হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে, কখনও মদের আসরে গিয়ে তোলা আদায়, কখনও ব্যবসায়ীদের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়— এ সবে হাত পাকিয়েছিলেন অনিমা। নিজেকে কখনও বাদুড়িয়া কখনও দেগঙ্গা, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি থানার অফিসার বলে পরিচয় দিতেন। ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পুলিশের পাকা চাকরি জোগাড় করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন