‘পাঁঠা-চোর’ ধরে বিস্মিত পুলিশও

টর্চ মেরে দেখা গেল, গাড়ির সিটে পা মুড়ে বসে নিশ্চিন্তে ঘাসপাতা চিবোচ্ছে নধরকান্তি একজন। তার সঙ্গীরা অবশ্য উদ্বেগে সরব। উর্দিধারীদের উদ্ধারকর্তা ভেবে আর্তচিৎকার জুড়েছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৬ ০৭:৫৫
Share:

অঙ্কন: নির্মাল্য প্রামাণিক।

টর্চ মেরে দেখা গেল, গাড়ির সিটে পা মুড়ে বসে নিশ্চিন্তে ঘাসপাতা চিবোচ্ছে নধরকান্তি একজন। তার সঙ্গীরা অবশ্য উদ্বেগে সরব। উর্দিধারীদের উদ্ধারকর্তা ভেবে আর্তচিৎকার জুড়েছে।

Advertisement

কেসটা একটু নাড়াচাড়া করতেই পুলিশের চোখ কপালে। গাড়িতে তুলে যাদের খাতির করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সকলকেই চুরি করে আনা হয়েছে। রবিবার রাতে গাইঘাটায় সেই ৭টি চোরাই ছাগলকে উদ্ধার করা হয়েছে। ধরাও পড়েছে একজন।

ছাগল চুরির চক্রের হদিস মেলাটা পুলিশের কাছেও বেশ নতুন রকম। এ তো আর শীতকালের ছুটিছাটায় পড়শির ছাগল ঝেপে ফিস্টি করা নয়। এ হল রীতিমতো ‘পাঁঠা চুরি চক্র’! গাইঘাটা থানার প্রবীণ এক পুলিশ কর্মী তো বলেই ফেললেন, ‘‘এত বছর হয়ে গেল ডিউটি করছি। প্রতিবেশীর পাঁঠা চুরি করায় হাতাহাতি, মারামারি, মায় খুনোখুনি পর্যন্ত হতে দেখেছি। কিন্তু গাড়িতে চাপিয়ে পাঁঠা চুরি করতে শুনিনি কখনও।’’

Advertisement

কী ভাবে জানা গেল চুরি-বৃত্তান্ত?

রবিবার রাতে যশোর রোড ধরে টহল দিচ্ছিল গাইঘাটা থানার পুলিশ। গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চলছিল। হঠাৎই নজরে পড়ে একটি ছোট গাড়ি দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। সেটিকে দাঁড় করানোর পরে পুলিশ কর্মীরা দেখেন, গাড়ির জানলা দিয়ে অপাপবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে কয়েকটি পাঁঠা!

ওই রাস্তা ধরে ভ্যানে বা ম্যাটাডরে চাপিয়ে ছাগল নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য নতুন নয়। ও ভাবেই হাটে-বাজারে যান ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সচরাচর অমন ছোট গাড়িতে করে ছাগল নিয়ে যাওয়া হয় না। গাড়ির ভিতরে টর্চ মেরে দেখা গেল, পিছনের সিটে, চালকের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও কিছু ছাগল।

পুলিশ দুই যুবকের নাম-ধাম জানতে চায়। ইতিমধ্যে গাড়ি থেকে নেমে পালায় চালক। পাশে বসে থাকা ভীম হীরা নামে ঠাকুরনগরের বাসিন্দা এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে জেরা করে জানা গিয়েছে, ছাগলগুলি চুরি করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ভদ্রডাঙা থেকে। ওই যুবকদের কাজই হল, ছাগল চুরি!

যুবককে থানায় এনে, ছাগলগুলি মালিককে ফেরানোর কথা ভাবতে বসেন পুলিশ কর্মীরা। ইতিমধ্যে, সোমবার সকালে ভদ্রডাঙার বিকাশ পাল থানায় এসে হাজির। তাঁর অভিযোগ, রবিবার রাতে বাড়ি থেকে সাত সাতটি পোষা ছাগল চুরি হয়ে গিয়েছে। ছাগল চুরির অভিযোগ থানায় জানাতে আসার সময়ে বিকাশবাবু অবশ্য খুব একটা আশায় ছিলেন না। লোকের সোনা-দানা চুরি গেলে তবু না হয় পুলিশকে বলে লাভ হয়। কিন্তু ছাগল চুরি গিয়েছে বললে পুলিশ পাত্তা দেবে তো, প্রশ্নটা মনের মধ্যে খচখচ করছিল। কিন্তু থানার কর্মীদের প্রতিক্রিয়া দেখে বিকাশবাবু তো থ। পুলিশ কর্মীরা তাঁকে বলেন, ‘‘কুছ পরোয়া নেহি। চোরাই পাঁঠা আছে আমাদের জিম্মাতেই।’’

দু’পক্ষের মিলন দৃশ্যে খোঁটায় বাঁধা পাঁঠা বা মালিকের চোখের কোণ চিকচিক করে উঠেছিল কিনা, তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে বিকাশবাবু ছাগলগুলিকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।

পুলিশের দাবি, ভীম জেরায় জানিয়েছে, কৌশিক বিশ্বাস নামে এক যুবক ছাগল চুরি চক্রের পাণ্ডা। সে পালিয়েছে। ধৃত যুবকের দাবি, তাকে কিছু না জানিয়েই রবিবার রাতে কৌশিক তাকে স্থানীয় মল্লিকপুরে নিয়ে গিয়েছিল। সে গাড়িতেই বসেছিল। মিনিট চল্লিশ পড়ে একপাল ছাগল নিয়ে এসে গাড়িতে তোলে কৌশিক। ধৃতকে সোমবার বনগাঁ আদালতের বিচারক ৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, হাবরা, বাগদা, গাইঘাটা, বনগাঁ-সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে রাতের অন্ধকারে গেরস্থের বাড়ি থেকে ছাগল চুরি করে ওই চক্রটি। বিভিন্ন জেলার বাজারে সেগুলি চড়া দামে বিক্রি করা হয়।

সব দেখেশুনে এক পুলিশ আধিকারিকের সরস মন্তব্য, ‘‘কত রকম যে পেশা মানুষের। পাঁঠা চুরি করেও লোকে সংসার চালাচ্ছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন