ওসি পিটিয়ে অভিযুক্ত ছাড়াল গ্রামের লোক, পরে ফের গ্রেফতার

এই জেলায় পুলিশ পেটানো নতুন ঘটনা নয়। ফাঁড়ি বা থানায় ঢুকে হুমকি ও হামলা কিংবা রাস্তায় কর্তব্য করার ‘অপরাধে’ ট্রাফিক পুলিশকে মার, গা সওয়া হয়ে গিয়েছে এই জেলার পুলিশের।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

এই জেলায় পুলিশ পেটানো নতুন ঘটনা নয়। ফাঁড়ি বা থানায় ঢুকে হুমকি ও হামলা কিংবা রাস্তায় কর্তব্য করার ‘অপরাধে’ ট্রাফিক পুলিশকে মার, গা সওয়া হয়ে গিয়েছে এই জেলার পুলিশের।

Advertisement

জেলার নাম বীরভূম। পুলিশ-নিগ্রহের সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেই এ বার থানায় ঢুকে ওসি-কে চড়-থাপ্পড় মেরে কয়লা চুরির কারবারে জড়িত এক দুষ্কৃতীকে ছাড়িয়ে নিয়ে গেল গ্রামের একদল পুরুষ-মহিলা। শুক্রবার কাঁকরতলা থানার ঘটনা। বিকেলে অবশ্য এলাকার তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পরে অভিযুক্তকে ফের ধরে এনে মুখরক্ষা করেছে পুলিশ। দিনের শেষে পুলিশ সুপার শুধু জানালেন, শেখ খিলাফত নামে ওই কয়লা কারবারিকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দিনের বাকি ঘটনা নিয়ে তিনি অবশ্য রা কাড়েননি। মুখ খোলেননি শাসকদলের নেতারাও।

ক’দিন আগেই নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িতে ঢুকে পুলিশ পিটিয়ে অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। সেখানে মূল অভিযুক্ত মন্ত্রী গৌতম দেব ঘনিষ্ঠ বিজন নন্দী। কাঁকরতলাতেও জড়িয়েছে তৃণমূলের নাম। খুন-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে খিলাফতের নামে। কাঁকরতলার বাড়রা গ্রামের এই বাসিন্দা এলাকায় সক্রিয় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। এ দিন থানায় ঢুকে হামলায় শাসকদলের স্থানীয় কিছু নেতার হাত রয়েছে বলেই দাবি।

Advertisement

ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে অবৈধ কয়লার রমরমা কারবার। বীরভূমে জেলায় এই কারবারে কাঁকরতলা থানার ‘বিশেষ ভূমিকা’ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রানিগঞ্জ কয়লাঞ্চল থেকে এবং ঝাড়খণ্ড থেকে পাচার হয়ে আসা কয়লা মূলত এই থানার মাধ্যমেই জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। মাস দেড়েক আগে সেই অবৈধ কয়লা কারবারে যুক্ত হয় কাঁকরতলা থানা এলাকার পারশুন্ডিতে গড়ে ওঠা অবৈধ একটি খোলামুখ কয়লা খনি। যেখান থেকে দিনে ৪০-৫০টি ট্রাক বোঝাই কয়লা চলে যেত অন্যত্র।

এলাকা সূত্রের খবর, তৃণমূলের যে সব নেতা-কর্মী এই কারবার দেখভাল করেন, তাঁদেরই অন্যতম শেখ খিলাফত। থানায় তাঁর অবাধ যাতায়াত। সংবাদমাধ্যমে দিন তিনেক আগে অবৈধ কয়লা কারবারের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় পুলিশ চাপে পড়ে। জেলার পুলিশ কর্তারা থানাকে চাপ দেন কারবারে রাশ টানতে। তার পরেই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করতে তৎপর হয় কাঁকরতলার পুলিশ।

এ দিন খিলাফতকে ধরে আনা তারই পরিণাম। আর সেটা করতে গিয়েই বিপত্তি! খিলাফত গ্রেফতারির খবর জানাজানি হতেই এলাকাবাসীর একাংশ থানায় চড়াও হয়ে ওসি কাবুল আলিকে পিটিয়ে খিলাফতকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। ওই লোকজনের বক্তব্য, ‘‘এত দিন পুলিশই এই কারবার চালাতে সাহায্য করছিল। তখন খিলাফতকে ধরার কথা মনে হয়নি তো! যেই উপর থেকে চাপ পড়ল, তখনই গ্রেফতার করতে হবে! তাই পুলিশকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন