Anis Khan

আনিসের ভাইকে আক্রমণে এখনও অধরা দুষ্কৃতীরা

আনিসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার অন্যতম সাক্ষী বছর ছাব্বিশের সলমন। শুক্রবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ আমতার দক্ষিণ সারদা গ্রামে বাড়ির চৌহদ্দিতেই তাঁর উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আমতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩৪
Share:

আনিসের বাবার সঙ্গে কথা বলছেন বামনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। রবিবার আমতার সারদা গ্রামে। ছবি: সুব্রত জানা

পেরিয়ে গিয়েছে দেড় দিনেরও বেশি সময়। হাওড়ার আমতার মৃত ছাত্রনেতা আনিস খানের খুড়তুতো ভাই সলমন খানের উপর হামলার ঘটনায় রবিবার পর্যন্ত পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। এ দিন সকালেই উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের আইসিসিইউ থেকে জখম সলমনকে ছেড়ে দেওয়ার (ডিসচার্জ) সিদ্ধান্তে কথা জানানো হলেও আপত্তি তোলেন পরিবারের লোকেরা। ওই সিদ্ধান্তে সন্দেহ প্রকাশ করে তাঁরা সলমনকে বাড়ি নিয়ে যাননি।

Advertisement

আনিসের অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলার অন্যতম সাক্ষী বছর ছাব্বিশের সলমন। শুক্রবার রাত সওয়া ১টা নাগাদ আমতার দক্ষিণ সারদা গ্রামে বাড়ির চৌহদ্দিতেই তাঁর উপরে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। টাঙি দিয়ে তাঁকে কোপ মারা হয়। তাঁর বাবা জালিম খানের অভিযোগ, ওই মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণেই শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা তাঁকে খুনের পরিকল্পনা করে। তৃণমূল অভিযোগ উড়িয়ে দেয়।

সলমনের পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে মারধর ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙ্গালিয়া বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।’’

Advertisement

জখম হওয়ার পরে শুক্রবার রাতে সলমনকে প্রথমে বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে ‘রেফার’ করা হয় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে। রাতেই তাঁকে ওই হাসপাতালের আইসিসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গড়া হয়। সলমনের পরিবারের দাবি মেনে শনিবার সকাল থেকেই হাসপাতালে পুলিশ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়।

রবিবার সকালেই জালিম খানরা জানতে পারেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সলমনকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে আপত্তি তোলেন জালিম। সন্দেহও প্রকাশ করেন। ছেলে পুরোপুরি সুস্থ না হলে তাঁরা বাড়ি নিয়ে যাবেন না বলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন জালিম। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আঘাতের গুরুত্ব বুঝে যাঁকে আইসিসিইউ-তে রাখা হল, কী এমন কারণ ঘটল যে মাত্র একদিন পরেই ছেড়ে দিতে হল?’’ একইসঙ্গে তাঁর অভিযোগ, ‘‘হামলার ঘটনা লঘু করে দেখাতেই এটা করা হয়েছে। ছেলে সুস্থ হয়নি। এখনও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে। এই অবস্থায় তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গেলে চিকিৎসা ও যথাযথ পরিচর্যা সম্ভব নয়।’’

আনিস এবং সলমনের পরিবারের সঙ্গে সবসময় থাকা ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অধিকার মঞ্চে’র পক্ষে অভীক নাগ বলেন, ‘‘আমাদের আশঙ্কা, শাসকদলের রাজনৈতিক চাপের কাছে্ নতিস্বীকার করে সলমনকে অসুস্থ অবস্থাতেই ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। উদ্দেশ্য একটাই, মামলাটিকে লঘু করে দেখানো।’’

এ দিন বিকেলে সলমনদের বাড়িতে এসে সিপিএমের টিকিৎসক-নেতা ফুয়াদ হালিম বলেন‌, ‘‘একজন চিকিৎসক হিসেবে বলতে পারি, কাউকে যখন আইসিসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়, তাঁর রোগের নিশ্চয় সেই গুরুত্ব আছে। এর পরের পদক্ষেপ হল তাঁকে সাধারণ শয্যায় নিয়ে আসা। কিন্তু ভর্তি হওয়ার একদিনের মধ্যেই সেই রোগীকে সরাসরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার কাছে বেশ বিরল ঘটনা হিসাবে মনে হয়েছে। কেন এটা করা হল তা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই বলতে পারবেন।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোনও রকম চাপ দেওয়ার অভিযোগ তৃণমূল অস্বীকার করেছে। ওই হাসপাতালের মেডিক্যাল বোর্ডের পক্ষে কেউ সরাসরি মুখ খুলতে রাজি হননি। তবে, বোর্ড সূত্রের দাবি, সলমনের আঘাত গুরুতর নয়। মাথায় মাত্র একটি সেলাই করতে হয়েছে। সিটি স্ক্যানের রিপোর্টেও কিছু মেলেনি। তিনি বিপন্মুক্ত। তাই সরাসরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বলেন, ‘‘এটা মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত। আমাদের কিছু করণীয় নেই।’’

রবিবার সলমনের বাড়িতে আসেন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। তিনি দোষীদের ধরার দাবিতে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে সই সংগ্রহ করেন। বিকেলে একই দাবিতে আমতা থানা পর্যন্ত মিছিল করেন ডিওয়াইএফআই এবং আইএসএফের কর্মী-সমর্থকেরা।। মিছিলে ছিলেন মীনাক্ষী-সহ দুই সংগঠনের নেতা এবং আনিসের বাবা সালেম খান। কর্মীরা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে উঠলে সালেম তাঁদের শান্ত করেন। আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে থানার সামনে মোতায়েন হয় পুলিশ বাহিনী। তবে ব্যারিকেডের সামনে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মীনাক্ষী। তাঁর দাবি, এটা আইনবিরুদ্ধ। এর বিরুদ্ধে তাঁরা আদালতে যাবেন বলেও জানান। এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি হাওড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ইন্দ্রজিৎ সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন