পাড়ায় পাড়ায় শান্তি কমিটি! নাজেহাল পুলিশ

কীসের কোটা? ওসি বললেন, ‘‘শান্তি কমিটির।’’ নবান্নের নির্দেশ, রাজ্যের সমস্ত থানা এলাকায় নূন্যতম ২০ জনকে নিয়ে বুথওয়াড়ি শান্তি কমিটি বানাতে হবে ওসিদের।

Advertisement

দেবজিৎ ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৭ ০৬:০৭
Share:

ফাইল চিত্র।

হাওড়ার এক শিশু চিকিৎসকের কাছে থানার ওসি-র সকাতর আর্জি ছিল, কোনও ওজর-আপত্তি নয়, ডাক্তারবাবুকে শান্তি কমিটিতে থাকতেই হবে। ডাক্তার নারাজ, পুলিশও নাছোড়। শেষমেশ অনেক টানাপড়েনের পরে ইতিবাচক সম্মতি দিয়ে পার পেয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। চেম্বার থেকে বেরিয়ে প্রায় যুদ্ধ জেতার ভঙ্গিতে ওসি-র মন্তব্য ছিল, ‘‘যাক, কোটা পূর্ণ হল।’’

Advertisement

কীসের কোটা? ওসি বললেন, ‘‘শান্তি কমিটির।’’ নবান্নের নির্দেশ, রাজ্যের সমস্ত থানা এলাকায় নূন্যতম ২০ জনকে নিয়ে বুথওয়াড়ি শান্তি কমিটি বানাতে হবে ওসিদের। এলাকায় চক্রান্ত, গুজব ও অপপ্রচার বন্ধ করতে ও একই সঙ্গে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বসিরহাটের দাঙ্গার পরে গত ৬ জুলাই ওই কমিটি তৈরির কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সময় দিয়েছিলেন ১৫ দিন। কিন্তু সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও অনেক থানা এখনও প্রয়োজনীয় সদস্য জোগাড় করে উঠতে পারেনি। ফলে, ক’দিন আগে নবান্নের তরফে কড়া তাগাদা (রিমাইন্ডার) গিয়েছে ওই সব থানার ওসিদের কাছে।

পুলিশ বলছে, সাধারণ ভাবে একেকটি থানা এলাকায় গড়ে দেড়শো করে বুথ রয়েছে। বুথপিছু ২০ জনকে নিয়ে কমিটি তৈরি করতে হলে কমপক্ষে ৩০০০ লোক দরকার। এত লোক মিলবে কোথায়? দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক ওসি-র সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘থানা চালাতেই হিমসিম অবস্থা। তার উপরে শান্তি কমিটির লোক খুঁজতে পুলিশ পাঠালে রোজকার কাজ শিকেয় উঠবে। তাই তৃণমূলের নেতাদেরই বলেছিলাম। ওঁরা যে তালিকা বানিয়ে দিয়েছেন, সেটাই নবান্নে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:বায়ুসেনার নিশানায় ছিলেন মুশারফরা

শুধু কি তাই? ‘‘সকলের নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর লেখা, ভোটার কার্ড খতিয়ে দেখা, সেই তথ্য সঠিক কি না, তা যাচাই করতে বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠানো, সব মিলিয়ে নাজেহাল আমরা’’— বলছেন উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী-থানার এক ওসি। হাওড়ার এক ওসির সহাস্য মন্তব্য, ‘‘কোনও দিন যদি শান্তি কমিটির সঙ্গে বৈঠক করার নির্দেশ আসে, সে দিন শরৎ সদন ভাড়া নিতে হবে। না হলে হাজার দুয়েক লোক বসবে কোথায়?’’

নবান্নের খবর, লোক জোগাড়ের পাশাপাশি গোল বেঁধেছে সদস্য বাছাই নিয়েও। গত ৮ জুলাই সমস্ত থানার ওসির কাছে যে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা গিয়েছে, তাতে কাদের সদস্য করা যাবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সরকার। তার মধ্যে যেমন মন্দির-মসজিদ ও চার্চের লোকজন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্য, খেলোয়াড়, শিল্পী ও শিক্ষকেরা। সেখানেই বলে দেওয়া হয়েছে, সদস্যদের পাড়ায় সুনাম থাকতে হবে, নেতা গোত্রের হলে চলবে না এবং অবশ্যই রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ হতে হবে। আর এই নির্দেশিকা মানতে গিয়েই সমস্যায় পড়েছেন ওসিদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘খড়ের গাদায় সুঁচ খুজছি। কারা যে রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ, তাই-ই ঠাওর হচ্ছে না।’’ তাই পুলিশের সমস্যা নিরসনে শাসক দলের নেতারাই আপাতত ত্রাতার ভূমিকায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন