দিলীপের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন

রামনবমীর মিছিলে অস্ত্রের আস্ফালন দেখে বুধবারই ঝাঁঝিয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাংলায় উদার হিন্দু ও বিদ্বজ্জনদের বড় অংশ তাঁর সঙ্গে সম মনোভাব পোষণ করছেন দেখে বৃহস্পতিবার আরও এক কদম এগোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

অস্ত্রধারী: খড়্গপুরে দিলীপ ঘোষ রামনবমীর মিছিলে। বুধবার।

রামনবমীর মিছিলে অস্ত্রের আস্ফালন দেখে বুধবারই ঝাঁঝিয়ে উঠেছিলেন তিনি। বাংলায় উদার হিন্দু ও বিদ্বজ্জনদের বড় অংশ তাঁর সঙ্গে সম মনোভাব পোষণ করছেন দেখে বৃহস্পতিবার আরও এক কদম এগোলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রামনবমীর মিছিলে তলোয়ার নিয়ে হাঁটার অভিযোগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খড়্গপুরের বিধায়ক তথা বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করল পুলিশ। একই অভিযোগে পোস্তা, এন্টালি এবং ভবানীপুর থানায় পুলিশ মামলা করেছে বিজেপি-র বিরুদ্ধে।

Advertisement

এ দিন পুরুলিয়ার বেলকুঁড়ি হাট ময়দানে সভা ছিল মমতার। সেখানেই বক্তৃতার সূত্রে রামনবমীর মিছিলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি যে রামকৃষ্ণ পরমহংস ঘরানার হিন্দু এবং রোজ চণ্ডীপাঠ করেন, তা গোড়ায় তুলে ধরেন। পাশাপাশি সূর্যস্তোত্র থেকে শুরু করে তাঁর স্মৃতিতে থাকা যাবতীয় মন্ত্র দীর্ঘ সময় নিয়ে পাঠ করে শোনান মমতা। এর পরই বিজেপি-কে হুঁশিয়ারি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যারা বাংলার সংস্কৃতি জানে না, বাংলাকে ভালবাসে না, বাংলার প্রতি দায়বদ্ধতা নেই, তারাই তলোয়ার নিয়ে ধমকাতে চমকাতে নেমেছে।’’ এক নিঃশ্বাসে তিনি এও জানিয়ে দেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী অস্ত্র নিয়ে মিছিল করলে আইন আইনের পথে হাঁটবে। এখানে আমি বা অন্য কেউ কোনও ফারাক নেই। এবিসিডি—আইনের চোখে সবাই সমান।’’

মুখ্যমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারির ঘণ্টাখানেকের মধ্যে দিলীপ ঘোষদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন থানায়। খড়্গপুরের পুলিশ দাবি করে, শোভাযাত্রায় যাতে অস্ত্রের প্রদর্শন না হয়, সে জন্য আগাম সতর্ক করা হয়েছিল। তা মানা হয়নি বলেই মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানান, ‘‘মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় বেরনো নিষিদ্ধ। তেমন অভিযোগ পাওয়ার কারণেই মামলা করেছে পুলিশ।’’

Advertisement

যদিও দিলীপবাবুদের বক্তব্য, ‘‘দিদিমণি বিজেপি-কে ভয় পাচ্ছেন। তাই রাজনীতিতে না পেরে এখন পুলিশ-প্রশাসনকে হাতিয়ার করছেন।’’ তাঁর কথায়, খড়্গপুরে রামনবমীর মিছিলে তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও ছিলেন। আইনের চোখে যখন সবাই সমান তখন দেখব ওঁর বিরুদ্ধেও মামলা হয় কি না। অন্যদিকে বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় মমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ‘‘দম থাকলে মুখ্যমন্ত্রী দিলীপ দা-কে গ্রেফতার করে দেখুন! তার পর দেখবেন কী হয়!’’

সন্দেহ নেই মমতার এই পদক্ষেপে আরও উজ্জীবিত হয়েছে বিজেপি। তাঁরা এও মনে করছেন, মমতা তাঁদের রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়িয়ে দিলেন। ‘হিরো’ হয়ে গেলেন দিলীপবাবু। বিতর্কে আরও ঘি ঢেলে তাই দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের সাফল্য এটাই যে মমতাকেও এখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে মন্ত্র পড়তে হচ্ছে। আর দিদির ভাইরা হাঁটছেন রামনবমীর মিছিলে।’’

এখন প্রশ্ন হল, মমতা কি জানেন না মামলা করলে উল্টে বিজেপি-র গুরুত্ব বাড়বে? এতে রাজ্যে রাজনীতিতে আরও ধার বাড়তে পারে ধর্মীয় মেরুকরণের? জবাবে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, দিদির এ দিনের বক্তৃতাতেই সব উত্তর রয়েছে। নিজেকে হিন্দু হিসাবে বড়াই করেও দিদি বোঝাতে চেয়েছেন, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা বাংলার হিন্দুদের সংস্কৃতি নয়। মা দুর্গার হাতে যা শোভা পায়, তা দুষ্কৃতীদের হাতে শোভা পায় না। কারণ, তাতে বাংলার শান্তির পরিবেশ নষ্ট হতে পারে। তাই তখন কঠোর প্রশাসকের ভূমিকা পালন করবেন তিনি। অর্থাৎ ‘ভালো হিন্দু’ আর ‘মন্দ হিন্দু’-র মধ্যে ফারাকটা মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন মমতা। তা ছাড়া তাৎপর্যপূর্ণ হল, অস্ত্র নিয়ে মিছিলে আপত্তি করলেও তৃণমূল কর্মীদের হনুমান পুজোতে কিন্তু আপত্তি করেননি মমতা। রামনবমীর মিছিলে সামিল হতেও তাদের বাধা দেননি। দলের ওই নেতার কথায়, আসলে বিজেপি যা শুরু করেছে, তাতে সংখ্যালঘু ভোট নিয়ে তৃণমূলের আর চিন্তা নেই। মমতা হয়তো করছেন, এর পর ‘ভাল’ ও উদার হিন্দুদের বড় অংশকে পাশে ধরে রাখতে পারলেই কোনও দুশ্চিন্তা থাকার কথা নয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন