জেলাশাসকের মারের পর এ বার পুলিশের চাপ? ‘নিখোঁজ’ বিনোদের সন্ধান মিলল রাতে

পরিবারের দাবি, বিনোদকে দিয়ে পুলিশ বলিয়ে নিতে চেয়েছিল যে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৫১
Share:

বিনোদ সরকার

সোমবার রাতে পুলিশের গাড়িতে চেপে ফালাকাটার হরিনাথপুরে নিজের বাড়িতে ফেরেন বিনোদ সরকার। পরের ২৪ ঘণ্টায় দফায় দফায় নাটক হয় জেলাশাসকের হাতে প্রহৃত যুবককে ঘিরে। রাতেই তাঁর খোঁজে আসে সাদা পোশাকের পুলিশ। পরিবারের দাবি, বিনোদকে দিয়ে পুলিশ বলিয়ে নিতে চেয়েছিল যে সব ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে।

Advertisement

সকালে বিনোদকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে গিয়েও প্রথমে বাধা পেতে হয়েছে বলে পরিবারের দাবি। তাঁদের আরও বক্তব্য, পরে ভর্তি নিলে বিনোদের সঙ্গে তাঁদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি। কয়েক ঘণ্টা পরে হাসপাতাল থেকে তিনি ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান। এ নিয়ে এফআইআর করতে গেলে সেটা নিতেও পুলিশ দীর্ঘ টালবাহানা করে বলে অভিযোগ।

শেষে অবশ্য এফআইআর নেওয়া হয়। রাত সোয়া ন’টার সময়ে নিখোঁজ বিনোদের দেখাও মেলে। কিন্তু দিনভর এই টানাপড়েন কেন, তাই নিয়ে পরিবারকে স্পষ্ট জবাব পুলিশ বা প্রশাসনের তরফে মেলেনি।

Advertisement

নাটকের শুরু সোমবার রাত থেকে। পুলিশের গাড়ি চেপে বিনোদ বাড়ি ফেরেন। তার পরে তাঁর বাড়ির লোকেরা অসুস্থ, আতঙ্কিত বিনোদকে পাঠিয়ে দেন জটেশ্বরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেই রাতেই পুলিশ এসে হাজির হয় হরিনাথপুরে। পরিবারের বক্তব্য— পুলিশের দাবি ছিল, বিনোদ সই করে জানিয়ে দিন, ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে। এর বদলে সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। যদিও পরে পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে।

রাতের এই ঝামেলা সামলে মঙ্গলবার দুপুরে অসুস্থ বিনোদকে নিয়ে ফালাকাটা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে যান পরিজনেরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভর্তি না নিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানায়। সেই হাসপাতালেই কিছুক্ষণ পর থেকে বিনোদের আত্মীয়-বন্ধুদের পথ আটকানো হয় বলে অভিযোগ। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় যখন তাঁরা বিনোদের ঘরে পৌঁছন, দেখেন বিনোদ নেই। এই নিয়ে বিকেলে শুরু হয় তুমুল হট্টগোল। হাসপাতালের সুপার চন্দন ঘোষ বলেন, “বিনোদ তো নেই, বেরিয়ে গিয়েছেন।” এই ঘটনায় সুপারের বিরুদ্ধে ফালাকাটা থানায় এফআইআর করে বিনোদের পরিবার।

রাতে সোয়া ন’টার সময়ে বিনোদের খোঁজ মেলে এলাকারই এক মানবাধিকার কর্মীর বাড়িতে। তিনি জানান, তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পরে এই বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের অভিযোগ, আসলে সব দিক সামলে তার পরেই বিনোদের খোঁজ তাঁদের জানিয়েছে প্রশাসন।

পুলিশ সুপার সুনীল যাদব এই নিয়ে কিছু বলতে চাননি। তবে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘জেলাশাসক নিখিল নির্মল ও তাঁর স্ত্রী নন্দিনীর বিরুদ্ধে এফআইআর সব দিক দেখে তবেই সেটা করা উচিত। আমরা আইন অনুযায়ীই কাজ করেছি। সেটা করতে যতক্ষণ লাগে, ততক্ষণই লেগেছে।’’ যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই নিখিল নির্মল ও নন্দিনী এখন কোথায়? জেলাশাসক দফতরের একটি সূত্রের দাবি, অর্ধেক দিন বাংলো বসে থাকার পরে তাঁরা গাড়িতে চেপে সম্ভবত কলকাতায় রওনা দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন