—প্রতীকী ছবি।
কাশ্মীরি শালওয়ালা জাভেদ আহমেদ খানকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় মোট পাঁচ জন গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
ধৃতদের পরিচয়ে স্থানীয় মানুষ বিস্মিত, কারণ প্রত্যেকেই এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের বাড়ি তাহেরপুরের নোটিফায়েড বি এবং সি ব্লকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই যুবকেরা কেন হঠাৎ উগ্র দেশপ্রেমের জিগির তুলে অসহিষ্ণু বিভেদকারী হয়ে উঠলেন এবং হামলা চালালেন, বুঝতে পারছেন না এলাকার লোকেরা।
ধৃতেরা হলেন যথাক্রমে অরিন্দম মজুমদার, বিশ্ব সরকার, সুব্রত দে ওরফে ম্যাক, বুদ্ধ মণ্ডল এবং রাজু কর্মকার। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৫, ৩৪, ৩২৩, ৪৪৭ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের রানাঘাট মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক প্রত্যেকের জামিন মঞ্জুর করেন। ধৃতদের মধ্যে বিশ্ব সরকারের বয়স তিরিশের কোঠায়। মাংসের
দোকান আছে। বাকিদের বয়স ২০-২২।
বুদ্ধ নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। এখন কাজের চেষ্টা করছেন। বাকি তিন জন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এঁদের প্রত্যেকেরই পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, গোলমালের খবর পেয়ে তাঁরা কী হচ্ছে দেখতে গিয়েছিলেন। তখন পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে। আসলে হামলার সঙ্গে এঁদের কেউ জড়িত নন। পুলিশ অবশ্য তা মানেনি। এবং রাজনৈতিক দলগুলি বিষয়টির রাজনীতিকরণ শুরু করেছে। জেলা তৃণমূলের সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত যেমন বলেছেন, “বিজেপি এবং আরএসএস-এর মদতেই অশান্তি ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। সবাইকেই সর্বশক্তি দিয়ে এটা রুখতে হবে।” আবার বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি জগন্নাথ সরকারের কথায়, “এর সঙ্গে বিজেপির যোগ নেই। তৃণমূল এখন সব কিছুতেই বিজেপি-আরএসএসের ভূত দেখছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাতে যে ভিড়টা গোলমাল শুরু করে তাতে প্রায় জনা তিরিশ জন ছিল। রাত আটটা নাগাদ তারা প্রথমে তাহেরপুর বাজারে অন্য একটি বাড়িতে হানা দেয়। সেখানেও কয়েক জন কাশ্মীরি শালওয়ালা ভাড়া থাকতেন। মারমুখী জনতা সেখানে ঢুকে জাভেদের খোঁজ করে। সেখানে তাঁকে না-পেয়ে তারা কাছের অন্য বাড়িতে যায়, যেখানে জাভেদ ও তাঁর তুতো ভাই মেহরাজউদ্দিন ভাড়া থাকতেন। সেই সময় জাভেদ বাড়ি ছিলেন না। তাঁকে না-পেয়ে ভিড়টা ফের আগের বাড়িতে ফিরে আসে।
সেখানে মজিদ নামে এক কাশ্মীরি শালওয়ালা, তাঁর ছেলে ও এক কর্মচারী ভাড়া থাকতেন। বাড়িতে ঢুকে উন্মত্ত জনতা ভাঙচুর শুরু করে। দরজা ও কল ভেঙে দেওয়া হয়। তবে মজিদদের গায়ে হাত দেওয়া হয়নি। এর পরে ওই ভিড় ফের যায় ভাড়াবাড়িতে। সেখানে জাভেদকে মারধর করা হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। কেন হামলাকারীরা বিশেষ ভাবে জাভেদের খোঁজ করছিল সে ব্যাপারেও পুলিশ এখনও স্পষ্ট কিছু জানায়নি।