মানুষ পাচারে ধৃতকে বাঁচানোর চেষ্টা, কাঠগড়ায় পুলিশই

উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের বাসিন্দা কবীর হোসেন মণ্ডলের বিরুদ্ধে একের পর এক যুবককে কাজ দেওয়ার নাম করে বিদেশে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সেই অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে গোপালনগর থানা। আদালতের নির্দেশে‌ চার দিনের পুলিশি হাজতে রয়েছে অভিযুক্ত। 

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া ও শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৮ ০৪:৫০
Share:

ভারতীয় এজেন্ট কবীর হোসেন মণ্ডল (মাঝে)। —ফাইল চিত্র।

উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরের বাসিন্দা কবীর হোসেন মণ্ডলের বিরুদ্ধে একের পর এক যুবককে কাজ দেওয়ার নাম করে বিদেশে পাচার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সেই অভিযুক্তকে গ্রেফতারও করে গোপালনগর থানা। আদালতের নির্দেশে‌ চার দিনের পুলিশি হাজতে রয়েছে অভিযুক্ত।

Advertisement

কিন্তু ‘প্রভাবশালী’ ওই অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে আনার জন্য পুলিশেরই একাংশ সক্রিয় হয়েছে বলে অভিযোগ তুলল পাচারের পরে ফিরে আসা যুবকের পরিবার। যথাযথ তদন্তের দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্যের মানুষ পাচার রোধে সক্রিয় একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থার চেয়ারপার্সন জিন্নার আলি বলেন, ‘‘পুলিশ মামলাটিকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা করছিল। বাকি অভিযুক্তেরাও অধরা। পুলিশের একাংশের সঙ্গে কবীর ও তার সঙ্গীদের যোগসাজশ রয়েছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে।’’ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে আনার জন্য পুলিশের তরফে তৎপরতার অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’

এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অভিযোগ, সম্প্রতি তাদের কাছে কিছু পরিবার অভিযোগ করে, গত কয়েক মাস আগে বিদেশে মোটা বেতনের চাকরি দেওয়ার নাম করে কবীর তাদের ছেলেদের মালয়েশিয়ায় নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে এমন সব কাজে ওই যুবকদের নিয়োগ করা হয়, যা করতে গিয়ে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ফোনে যোগাযোগ করে বিদেশের মাটিতে থাকা যুবকদের সঙ্গে। ওই যুবকদের অভিযোগ, ভারী ভারী লোহার রড বইতে দেওয়া, ক্যাসিনোয় কাজ দেওয়া হয়েছে তাঁদের।

Advertisement

আরও পড়ুন: পার্শ্বশিক্ষকদের মিছিলে ধস্তাধস্তি

বাগদা থানার মধুপুর গ্রামের জুলফিকার আলি মণ্ডল এমনই এক ভুক্তভোগী। মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা বেতনের লোভ দেখিয়ে সেপ্টেম্বরে তাঁকে রাজমিস্ত্রি হিসেবে মালয়েশিয়ার এক নির্মাণ সংস্থায় নিয়ে গিয়েছিল কবীর। গোপালনগরে কবীরের রোহন ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি এজেন্সি রয়েছে। অভিযোগ, জুলফিকারকে মালয়েশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়ায় পাচার করে দেওয়া হয়। জুলফিকারের মা জাহানারা মণ্ডলের অভিযোগ, ভারী ভারী রড বইতে গিয়ে এক দিন তাঁর ছেলে ছাদ থেকে পড়ে যান, হাতে-পায়ে চোট পান। কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি ওই সংস্থা। ছেলে কোনও ভাবে ফোন করে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে বলে। কবীরের অফিসে গেলে তার লোকজন জানায়, ছেলেকে আনতে হলে ৬০ হাজার টাকা এবং আইনজীবীর ফি দিতে হবে! কবীরের হাত ধরে হুগলির পাণ্ডুয়ার সঞ্জয় মণ্ডলও একই ভাবে পাচার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: মাঞ্জা সুতোয় বাইকচালক জখম, পড়ে মৃত্যু সঙ্গীর

তদন্তকারীরা জেনেছেন, এক-দু’জন নয়। কাজ দেওয়ার নাম করে কবীর তার সংস্থা রোহন ইন্টারন্যাশনাল এবং তৌফিক ম্যান-পাওয়ার কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে কয়েকশো যুবককে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে পাচার করেছে। অনেকে ফিরে আসতে চাইলেও তাঁদের আটকে রাখা হয়েছে। অনেকেরই ভিসা-পাসপোর্টের মেয়াদ ছিল মাত্র তিন মাস। ফলে বিদেশের মাটিতে গিয়ে অনেকেই কোথায় রয়েছেন, তাঁদের পরিবারও তা জানে না!

এ-হেন কবীরকে ছাড়িয়ে আনার জন্য পুলিশের একাংশের সক্রিয়তা ঘিরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। যদিও এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলার পুলিশকর্তা। প্রশ্ন উঠছে, যদি তা-ই হয়, তা হলে পুলিশ সকলের অভিযোগ নিচ্ছে না কেন?

এএসপি অভিজিৎবাবু বলেন, ‘‘অভিযোগ করতে এসে সাহায্য পাননি, এমন অভিযোগ আমার কাছে নেই। থানা অভিযোগ না-নিলেও আরও উচ্চপদস্থ কর্তারা রয়েছেন। অভিযোগকারী পরিবারগুলি তাঁদের কাছে যাচ্ছেন না কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন