পার্শ্বশিক্ষকদের বিক্ষোভ, লাঠি চালাল পুলিশ, ছাড় পেলেন না মহিলারাও

গত শুক্রবার সল্টলেকে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন পার্শ্বশিক্ষকেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৯ ০২:১০
Share:

কল্যাণীতে পার্শ্বশিক্ষকদের উপরে এ ভাবেই লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সম কাজে সম বেতন এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পার্শ্বশিক্ষকদের সহকারী শিক্ষকের মর্যাদার দাবিতে আন্দোলনে বেধড়ক লাঠি চালাল পুলিশ। রেয়াত করা হয়নি মহিলাদেরও। তখনকার মতো হটে যেতে বাধ্য হলেও অন্তত শ’পাঁচেক পার্শ্বশিক্ষক নদিয়ার কল্যাণী স্টেশনে প্ল্যাটফর্মে রাত কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

Advertisement

গত শুক্রবার সল্টলেকে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়েছিলেন পার্শ্বশিক্ষকেরা। তাঁদের অভিযোগ, সেখানেই পুলিশ তাঁদের যথেষ্ট হেনস্থা করে। শনিবার কল্যাণীতে মেন স্টেশন সংলগ্ন বাস টার্মিনাসে তাঁরা অবস্থানে বসেন। কিন্তু সন্ধ্যায় পুলিশ মারমুখী হয়ে ওঠে বলে অভিযোগ। পার্শ্বশিক্ষক ঐক্য মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক ভগীরথ ঘোষ অভিযোগ করেন, ‘‘শতাধিক শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে। এটা কোনও গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ হতে পারে না। কলকাতা থেকে মার খেয়ে কল্যাণীতে এসেছিলাম। এখানেও মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হল।’’

পার্শ্বশিক্ষকদের বক্তব্য, প্রাথমিক স্কুলে তাঁদের ১০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়, উচ্চ প্রাথমিকে দেওয়া হয় ১৩ হাজার টাকা। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে নিয়োগ পাওয়া পার্শ্বশিক্ষকদের যোগ্যতা পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের চেয়ে বিশেষ কম নয়। তাঁরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এখন উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। কিন্তু এই পার্শ্বশিক্ষকেরা যখন উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ পেয়েছিলেন তখন তাঁদের ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল স্নাতক উত্তীর্ণ। ফলে অনেক পার্শ্ব শিক্ষক শিক্ষাগত যোগ্যতার নিরিখে অনেক পূর্ণ সময়ের শিক্ষকের চেয়ে এগিয়ে। তাঁদের আক্ষেপ: তৃণমূল নেতৃত্ব এক সময়ে পূর্ণ সময়ের শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি।

Advertisement

দুপুরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে এসে কল্যাণীতে জমায়েত হতে শুরু করেন পার্শ্বশিক্ষকেরা। কিছু ক্ষণের মধ্যে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজহার এ তৌসিফের নেতৃত্বে কল্যাণী ও আশপাশের কয়েকটি থানার পুলিশ এলাকা ঘিরে ফেলে। তারই মধ্যে শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান কল্যাণীর একাধিক বিজেপি নেতা। সন্ধ্যায় পুলিশের তরফে বলা হয় বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে গিয়ে অবস্থান করতে। পার্শ্বশিক্ষকেরা তাতে রাজি হননি।

এর পরেই পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে বলে অভিযোগ। মহিলাদের রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়। কয়েক জন মহিলা শিশু কোলে এসেছিলেন। তাঁদের রেয়াত করা হয়নি। বাসস্ট্যান্ড থেকে বেরিয়ে অনেকে এফসিআই এর গুদামের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। ডিএসপি পদমর্যাদার এক অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানেও চড়াও হয় বলে অভিযোগ। মার খেয়ে অনেকে রাস্তার পড়ে যান, জামাকাপড় ছিঁড়ে যায়। এক শিক্ষককে মার খেতে দেখে তাঁর শিক্ষিকা স্ত্রী ছাড়াতে এসেছিলেন। তাঁকেও রাস্তায় ফেলে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ আন্দোলনকারীদের তাড়িয়ে কল্যাণী স্টেশনে ঢুকিয়ে দেয়।

পুলিশ কেন লাঠি চালাল? কেন মহিলাদেরও পেটানো হল? রাতে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভি এস আর অনন্তনাগ শুধু বলেন, ‘‘আমি গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন