Lalbazar

Covid Mediclaim: করোনা-মুক্তির পরে বিমায় ফাঁস লাল ফিতের

কিছু ফাইল আটকে থাকার কথা পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে মেনে নেওয়া হয়েছে। ওই সূত্রের বক্তব্য, অতিমারি পরিস্থিতি চলতে থাকায় এক লক্ষ বা তার বেশি টাকার বিল আছে, এমন কিছু ফাইল ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ছিলেন খাস লালবাজারের দুঁদে পুলিশকর্তা। অতিমারির সূচনাতেই করোনাভাইরাস তাঁকে কাবু করে ফেলেছিল। এক মাস কার্যত যমে-মানুষে টানাটানির পরে বেসরকারি হাসপাতালের কয়েক লক্ষ টাকার বিল মিটিয়ে ছাড়া পান। করোনার থাবা থেকে মুক্ত হলেও প্রাক্তন পুলিশকর্তা বিকাশ চট্টোপাধ্যায় খাবি খাচ্ছেন সরকারি লাল ফিতের ফাঁসে। টাকা ফেরত চেয়ে সরকারি দফতরে মেডিক্লেমের বিল জমা দেওয়ার পরে দেড় বছর কেটে গিয়েছে। অফিসে অফিসে দৌড়ঝাঁপ করতে করতে ক্ষয়ে গিয়েছে কার্যত জুতোর সুখতলা। কিন্তু স্বাস্থ্য বিমার সেই প্রাপ্য টাকা মেলেনি।

Advertisement

বিকাশবাবু বলছেন, ‘‘আমার ফাইল নানা অফিস ঘুরে চলেছে। বার বার তদ্বির করতে হয়েছে। শেষে জানা গিয়েছে, তা রাইটার্সে বিল্ডিংয়ে পড়ে আছে। ফাইল ছাড়ার কর্মী অফিসে আসছেন না বলে কাজও হচ্ছে না।’’

বিকাশবাবুর ফাইল পড়ে থাকার ঘটনাকে ঘিরে সরকারি দফতরের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পুলিশের একাংশ বলছে, বিকাশবাবু কলকাতা পুলিশে দীর্ঘ কালের দাপুটে অফিসার। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে পরিচিত নাম। চিকিৎসা বিমার প্রাপ্য টাকা পেতে তাঁকেই যদি দিনের পর দিন এ ভাবে হেনস্থা হতে হয়, তা হলে আমজনতার কী হবে?

Advertisement

বিকাশবাবু জানান, ২০২০ সালের অগস্টে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। চেষ্টা করেও সরকারি এবং কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাননি। শেষ পর্যন্ত ভর্তি হন
লেনিন সরণির এক বেসরকারি হাসপাতালে। অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ায় তাঁকে আইসিইউ-এ স্থানান্তরিত করা হয়। মাসখানেক পরে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। চিকিৎসার কাগজপত্র জমা দেন ধর্মতলায় সেন্ট্রাল ডিভিশনের অফিসে। সেই নথি লালবাজারে যায়। সেখান থেকে জানানো হয়, নথি নবান্নে গিয়েছে। নবান্নে খোঁজ করে বিকাশবাবু জানতে পারেন, নথি রাইটার্স বা মহাকরণে পাঠানো দরকার। ফের লালবাজারে তদ্বির-তদারকির পরে নতুন ভাবে ফাইল তৈরি করে পাঠানো হয় মহাকরণে। সেখানে ফাইল দীর্ঘ কাল ধামাচাপা পড়ে ছিল। কাজ না-এগোনোর কারণ হিসেবে বলা হয়, অফিসার নেই। তার পরে অনেক চেষ্টায় ফাইল উদ্ধার হয়। সেটি পাশ হয় ২০২১-এর মাঝামাঝি।

বিকাশবাবু জানান, মহাকরণ থেকে নিজে ফাইল বয়ে এনে তিনি তা জমা দেন ধর্মতলায়
পুলিশের অফিসে। দিন সাতের পরে সেটি যায় ‘পে অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস’ বিভাগে। কিছু খরচের ব্যাখ্যা সরকারি কর্তারা দেননি, এই যুক্তিতে সেখান থেকে ফাইল ফেরত আসে। লালবাজার ঘুরে ফের তা মহাকরণে গিয়েছে। প্রাক্তন পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘ফাইল রেডি করার কেরানিবাবু অফিসে আসছেন না। তাই ফাইল পড়েই আছে।’’

সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, কোভিড পরিস্থিতিতে বিকাশবাবু সরকারি তালিকাভুক্ত হাসপাতালে ভর্তি হননি বলে এমনিতেই তিনি নির্ধারিত অঙ্কের ২০ শতাংশ টাকা কম পাবেন। তার পরেও নানা টালবাহানায় ফাইল পড়ে থাকছে। প্রাপ্যের ২০ শতাংশ কাটা যাওয়ায় আক্ষেপও আছে ওই প্রাক্তন পুলিশকর্তার। তিনি বলছেন, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে কোনও জায়গায় শয্যা খালি ছিল না। সেই অবস্থায় তালিকাভুক্ত হাসপাতালে ভর্তি হতে না-পারা কি আমার দোষ?’’

কিছু ফাইল আটকে থাকার কথা পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে মেনে নেওয়া হয়েছে। ওই সূত্রের বক্তব্য, অতিমারি পরিস্থিতি চলতে থাকায় এক লক্ষ বা তার বেশি টাকার বিল আছে, এমন কিছু ফাইল ছাড়তে বিলম্ব হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন