শুধু ভাটি ভেঙে যে লাভ হচ্ছে না, বুঝেছিলেন আবগারি দফতরের কর্মীরা। চোলাই মদের কারবার রুখতে রাশ টানা চাই কাঁচামাল চিটেগুড়ের লেনদেনে। অনেক দিন ধরেই তক্কে তক্কে থাকার পর হদিশ মিলল বিপুল পরিমাণ চিটে গুড়ের দুটি ভাঁড়ারের।
মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানা এলাকার দৌলতপুরের দু’টি বাড়ি থেকে পাওয়া গেল ১ লক্ষ ৩০ হাজার কিলোগ্রাম চিটে গুড়! দাম প্রায় ২১ লক্ষ টাকা। অফিসারেরা বলছেন, এই গুড় দিয়ে তৈরি চোলাই মদের দাম অন্তত ৭২ লক্ষ টাকা!
অফিসারেরা জানান, বাড়ির এক তলার ঘরে বড় বড় বাক্স, টিন ও প্লাস্টিকের ড্রাম ভর্তি করে রাখা ছিল চিটে গুড়। বস্তায় ভরে রাখা ভেলি গুড় ও চিনি। চোলাই মদ তৈরির জন্যই যে এই বিপুল মজুত, তা নিশ্চিত আবগারি দফতর। বিষ্ণুপুরের পৈলান বরাবর চোলাই মদের জন্য ‘কুখ্যাত’। চিটে গুড় পচিয়ে রস বার করে চোলাই তৈরি হয়। তার পর তা বিক্রি হয়। একটা ভাটি ভাঙা হলে কিছু দূরে অন্য একটা ভাটি গজিয়ে ওঠে। ফলে লাভ হয় না। এক আবগারি কর্তার কথায়, ‘‘বেআইনি চোলাই মদের কারবারে রাজ্যের প্রচুর রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে।’’
২০১১-তে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে চোলাই মদ খেয়ে ১৭২ জন মারা গিয়েছিলেন। জানা যায়, নেশা বাড়াতে চোলাইয়ের সঙ্গে মিথানল মেশানো হয়েছিল— যা থেকে বিষক্রিয়া। আবগারি কর্তার কথায়, ‘‘এ ভাবে মিথানল মেশানোর প্রবণতা সর্বত্র বেড়েছে। ফলে, এক দিকে মৃত্যুর আশঙ্কা, অন্য দিকে রাজস্বের ক্ষতি।’’ চোলাইয়ের নেশা কাটাতে সস্তায় দেশি মদ তৈরি করে বাজারে ছেড়েছে রাজ্য। তাতেও চোলাইয়ের রমরমা কমেনি।
আবগারি দফতর সূত্রের খবর, ১৯৭৩-এর কেন্দ্রীয় সরকারের ‘মোলাসেস কন্ট্রোল অ্যাক্ট’ অনুযায়ী, লাইসেন্স না থাকলে বাড়িতে বড়জোর ৫ হাজার কিলোগ্রাম চিটে গুড় রাখা যায়। পৈলানের দৌলতপুরের ঘটনায় দু’জনের কাছে কোনও লাইসেন্স ছিল না বলেই দফতর সূত্রে খবর।