শিশু পাচার কাণ্ড

বোরখায় ঢাকা মহিলা চিকিৎসকের খোঁজ

গত কয়েক বছর ধরে বাদুড়িয়ার একাধিক জায়গায় কাজ করে গিয়েছে কুলসুম ডাক্তার। কিন্তু তার একখানা ছবি পর্যন্ত জোগাড় হয়নি। কারণ, বাদুড়িয়ার অনেকেই সিআইডিকে জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবু সমস্ত সময় বোরখায় মুখ ঢেকে রাখতেন। নকাব সরানো তাঁর চেহারা না তো রোগীরা দেখছেন, না ওষুধের দোকানের কর্মী।

Advertisement

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৯
Share:

নামফলক থেকে ঘষে তুলে দেওয়া হয়েছে কুলসুমের নাম। —নিজস্ব চিত্র

‘ডাঃ কুলসুম আহমেদ। ডব্লিউবিবিএসডিজিও’।

Advertisement

শিশু পাচারচক্রের সন্ধানে নেমে আপাতত এঁরই খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছে সিআইডি।

শনিবার দিনভর বাদুড়িয়ার বিভিন্ন ওষুধের দোকান, ক্লিনিকে হানা দেন সিআইডি গোয়েন্দারা। কুলসুম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। তবে মহিলার খোঁজ মেলেনি।

Advertisement

গত কয়েক বছর ধরে বাদুড়িয়ার একাধিক জায়গায় কাজ করে গিয়েছে কুলসুম ডাক্তার। কিন্তু তার একখানা ছবি পর্যন্ত জোগাড় হয়নি। কারণ, বাদুড়িয়ার অনেকেই সিআইডিকে জানিয়েছেন, ডাক্তারবাবু সমস্ত সময় বোরখায় মুখ ঢেকে রাখতেন। নকাব সরানো তাঁর চেহারা না তো রোগীরা দেখছেন, না ওষুধের দোকানের কর্মী।

আপাতত কুলসুম সম্পর্কে কিছু তথ্য হাতে এসেছে সিআইডি-র।

সপ্তম শ্রেণি পাস কুলসুম দাবি করত, বর্ধমান থেকে ডাক্তারি পাস করেছে সে। যদিও সেই শংসাপত্র জাল বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। নিজেকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দিত কুলসুম। সপ্তাহে কয়েক দিন গাড়িতে করে বাদুড়িয়ায় আসত। বাড়ি কোথায়, তা নিয়ে স্পষ্ট তথ্য হাতে আসেনি।

কিন্তু ওই মহিলাকে কেন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা?

বাদুড়িয়ার সোহান নার্সিংহোম থেকে তিন সদ্যোজাতকে উদ্ধারের পরে রাজ্য জুড়ে শিশু পাচারের জাল একটু একটু খুলছে। ধৃতদের জেরা করে সিআইডি জানতে পারছে, শিশু পাচার চক্রে কুলসুমের বড়সড় ভূমিকা ছিল। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের মতে, মহিলা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে গ্রামে জনপ্রিয়তা ছিল কুলসুমের। সেই সূত্রে বহু অন্তঃসত্ত্বাকে সে প্রসবের জন্য বিভিন্ন নার্সিংহোমে ভর্তি করাত। বিভিন্ন ক্লিনিক, নার্সিং‌হোমে বেআইনি গর্ভপাতের ব্যাপারে মহিলা, বিশেষত অন্তঃসত্ত্বা কুমারী মেয়েদের যোগাযোগ করিয়ে দিত। প্রসবের পরে সেই সব শিশুর কাউকে কাউকে পাচার করা হতো বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

শনিবার বাদুড়িয়ার বর্ণালী মার্কেটের ওষুধের দোকান, অশ্বত্থতলা, যদুরআটি, বদরহাটে কুলসুমের বিভিন্ন চেম্বারেও হানা দেয় সিআইডি। একটি চেম্বারের বাইরে দেখা গেল, নামফলক থেকে ঘষে ঘষে কুলসুমের নাম তুলে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাহানুর আলি, সফিকুল ইসলামরা বলেন, ‘‘সপ্তাহে একদিন এসে অসংখ্য রোগী দেখতেন ম্যাডাম। কিন্তু আমরা ওঁকে কখনও চোখে দেখিনি। সব সময়েই বোরখায় মুখ ঢাকা থাকত।’’ গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘আমরা ভাবতাম ধর্মপ্রাণ বলে নিজেকে সব সময়ে হিজাবে ঢেকে রাখেন। কিন্তু এখন তো দেখছি, অন্য কেস!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement