কোচবিহারে আজ মমতা, গোষ্ঠী সংঘর্ষ থামাতে নেতাদের হুঁশিয়ারি পুলিশের

আজ, কোচবিহারে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক আগে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করছেন তৃণমূল ও যুব সংগঠনের নেতারা। রবিবার সেই নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিল পুলিশ। 

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:২৭
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।— ফাইল চিত্র।

আজ, কোচবিহারে আসবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ঠিক আগে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে দফায় দফায় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে দেখা করছেন তৃণমূল ও যুব সংগঠনের নেতারা। রবিবার সেই নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়ে হুঁশিয়ারি দিল পুলিশ।

Advertisement

সেই সময়ই সতর্ক করে দেওয়া জনিয়ে দেওয়া হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেকের ভুমিকা নিয়েই সন্তুষ্ট নন। সেখানে জেলার এক যুব নেতাকেও সতর্ক করে দিয়ে এক পুলিশ কর্তা জানান, তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সাবধানে না চললে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ অল্প সময়ের মধ্যে হতে পারে। মাস তিনেক আগে কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধায় প্রশাসনিক বৈঠকে দিনহাটার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহকে ওই এলাকা দেখভালের দায়িত্ব দেন। পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডেকেও বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তার পরেও পাল্টায়নি সেই চিত্র।

কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “যাদের নামে মামলা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, দলের কারও নামে কোনও অভিযোগ নেই। যারা দুষ্কর্ম করছেন। তারা দলের কেউ নন। দিনহাটার বিধায়ক উদয়নবাবু এদিন অবশ্য বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী একবার বলে গিয়েছেন। তাঁর জন্য সবসময় বসে থাকা ঠিক নয়। গোটা রাজ্য তাঁকে দেখতে হয়। তিনি বলার পরেও আমরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে চলতে পারছি না। আইনশৃঙ্খলার সমস্যা মিটছে না। এটা আমাদের ব্যর্থতা।” যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “আমার এমন কোনও বিষয় জানা নেই। আর যারা খারাপ কাজ করছেন, তাঁরা সংগঠনের কেউ নন। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।”

Advertisement

আরও পড়ুন: গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মেটাতে কঠোর বার্তা চাইছে দিনহাটা

দলীয় সূত্রে খবর, পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়কাল থেকে কোচবিহারে তথা দিনহাটায় তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। যুব ও তৃণমূলের লড়াইয়ে গুলি-বোমার লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা জেলা। দিনহাটার গীতালদহে তৃণমূল কর্মী আবু মিয়াঁ খুনের মামলায় নাম জড়ায় যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিশীথ প্রামাণিকের। আবার দিনহাটায় যুব কর্মী কলেজ অলোকনিতাই দাসের খুনের মামলায় নাম জড়ায় তৃণমূলের কাউন্সিলর জয় ঘোষ, টিএমসির প্রাক্তন সভাপতি (ওই মামলায় জড়ানোর পর বহিষ্কার করা হয়) সাবির সাহা চৌধুরীর। এর বাইরেও একাধিক মামলা রয়েছে ব্লক ও অঞ্চলস্তরের অনেক তৃণমূল নেতার নামেই। পুলিশ ওই অভিযুক্তদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। অভিযোগ, মামলায় অভিযুক্ত নিশীথবাবু সহ অনেকেই পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সফরসূচি নিয়ে। নিশীথবাবু অবশ্য ওই বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেন, “ওই মামলায় গোপন জবানবন্দি হয়েছে। তাতে নিশীথবাবুর নাম নেই।”

দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছেন শাসক দলেরই একটি অংশ। রাজ্যস্তরের নেতাদের চাপেই সামনে পেয়েও অভিযুক্ত নেতাদের অনেককেই গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এই অবস্থায় দল যে কোচবিহারে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে সে খবর পৌঁছে গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও। পরিস্থিতি সামাল দিতে যুব নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে কোচবিহারে। তাতেও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। এবারে মুখ্যমন্ত্রী কোচবিহার সফরে এসে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেবেই বলে মনে করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন