ছিটমহল ঘিরে শুরু রাজনীতির লড়াইও

আবেগের মধ্যেই সন্তর্পণে ছিটমহলে শিকড় ছড়াচ্ছে রাজনীতিও। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই ছিটমহলের মানুষের কাছে পৌঁছতে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে। সেই সন্ধ্যায় তখন আবেগে ভাসছে গোটা ছিটমহল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪২
Share:

অষ্ঠান মঞ্চে পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও উদয়ন ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

আবেগের মধ্যেই সন্তর্পণে ছিটমহলে শিকড় ছড়াচ্ছে রাজনীতিও। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেই ছিটমহলের মানুষের কাছে পৌঁছতে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

সেই সন্ধ্যায় তখন আবেগে ভাসছে গোটা ছিটমহল। রাত সাড়ে ১০টা। আর কিছুক্ষণ পরেই ভারতের বাসিন্দা হবেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। মশালডাঙায় স্বাধীনতা উদযাপনের দুটি মঞ্চে আলো জ্বলে আছে। দর্শকদের আসন থাকা বাতিগুলি নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাইকে জানানো হল, এবার বিনিময় সমন্বয় কমিটির দীপ্তিমান সেনগুপ্ত কিছু বলবেন। তিনি মঞ্চে উঠলেন। তবে একা নন। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে জড়িয়ে ধরে এক সঙ্গে মঞ্চে উঠলেন। রবীন্দ্রনাথবাবুর পাশে একটি আসন ছেড়েই বসেছিলেন দিনহাটার বিধায়ক তথা ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ। ওই একই সময়ে তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন বিনিময় সমন্বয় কমিটির আরেক নেতা আহসান হাবিব। পাশের মঞ্চে উঠলেন তাঁরা। দীপ্তিমান দু-একটি কথা বললেন। বলতে বলতে রবিবাবুর হাত ধরে কেঁদেও ফেললেন। আন্দোলনে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদও জানালেন রবীন্দ্রনাথবাবুকে। এর পর মাইক তুলে দিলেন রবীন্দ্রনাথবাবুর হাতে। যিনি মাইক হাতে দাবি করলেন, মমতা বন্দ্যোপাধায়ের জন্যই আজ স্বাধীন হতে পেরেছে ছিটমহল। তৃণমূলের আগের সরকার কিছু করেনি। আর উদয়নবাবু মাইক হাতে বললেন, ১৯৯২ সালে তিনবিঘা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল যে দল আজকের শাসক দলের নেতারা ওই সময় সেই দলেই ছিলেন।

ওই রাতে ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির আয়োজিত অনুষ্ঠান মঞ্চ এ ভাবেই শেষ পর্যন্ত শাসক-বিরোধীর তরজা মঞ্চ হয়ে ওঠে। তবে কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “আমরা ছিটমহলের মানুষের আন্দোলন, সমন্বয় কমিটির আন্দোলন তুলে ধরেছি ওই অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ভোট রাজনীতির বৈশিষ্ট্য হিসেবেই হয়ত শাসক-বিরোধীর তরজা হয়েছে। আগামী দিনেও হয়ত তা হবে। আমরা ছিটমহলের বাসিন্দাদের কাছে সেই বার্তাই পৌঁছে দিয়েছে, তাঁরা নিজেদের স্বাধীনতা অনুযায়ী রাজনীতি করবেন।”

Advertisement

ছিটমহল সমস্যার সমাধানে কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এ বারে ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিজেদের দলে টানতে তৎপর হয়ে উঠেছে সব দল।

ছিটমহলের বাসিন্দাদের নিয়ে রাজনীতি অবশ্য নতুন নয়। সমস্যার শুরু থেকেই ওই এলাকার মানুষকে নিয়ে রাজনীতি শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলি। অভিযোগ, ভোট রাজনীতির দিকে তাকিয়েই ছিটমহলের বাসিন্দাদের ব্যবহার করা হয়। মিছিল, মিটিঙয়ে লোক বাড়াতে ছিটমহল থেকে বাসিন্দাদের নিয়ে যাওয়া হয়। অনেককেই ভোটার কার্ড তৈরি করে দিয়ে তাঁদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবেও ব্যবহার করা হত। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে প্রথম দিকে ছিটমহলের বাসিন্দাদের মধ্যে সংগঠন তৈরির চেষ্টা না করলেও বর্তমানে সক্রিয় হয়ে উঠেছে তাঁরা।

তৃণমূলের ব্লক স্তরের নেতারা তো বটেই, দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ প্রতিদিন নিয়ম করে কোনও না কোনও ছিটমহলে যাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই যে ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হয়েছে, এমনটা দাবি করে প্রচারও করেছেন। আগামী দিনে যে কোনও প্রয়োজনে ছিটমহলের মানুষ তাঁকে পাবেন, সে প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন তিনি। বসে নেই ফরওয়ার্ড ব্লক, বিজেপির মতো দলও। ফব তাদের দীর্ঘ আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ছিটমহলের মানুষকে কাছে টানার চেষ্টা করছে।

ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি, ছিটমহল সমস্যা শুরু হয় যেদিন থেকে, সেদিন থেকেই তাঁরা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। দলের যত রকম মিটিং, সম্মেলন হয়েছে সর্বত্র প্রথম ও প্রধান দাবি ছিল ছিটমহল বিনিময়ের। একসময় ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির প্রয়াত নেতা দীপক সেনগুপ্ত ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রথম সারির নেতা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন দলের বিধায়ক ছিলেন। সেই সময় থেকেই কমল গুহ, দীপক সেনগুপ্ত, সাংসদ অমর রায় প্রধান ওই দাবিতে সরব হয়েছেন। ১৯৯২ সালেও তিনবিঘা করিডর নিয়ে আন্দোলন করেন তাঁরা। উদয়নবাবু বলেন, “একটা মহল থেকে ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা হচ্ছে। দীপক সেনগুপ্তের আন্দোলনকে ছোট্ট পরিসরে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। ফরওয়ার্ড ব্লকে থেকেই তিনি ওই আন্দোলনের শরিক ছিলেন। শেষ অবধি আমরা লড়াই করেছি।” রবীন্দ্রনাথবাবুর অবশ্য দাবি, ফরওয়ার্ড ব্লক ভোট রাজনীতির বাইরে কিছু করেনি। ওই এলাকার মানুষদের কষ্টের জীবনকে হাতিয়ার করে তাঁরা রাজনীতি করেছেন। তাঁর কথায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে ওই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলেন, তাঁর জন্যই স্বাধীনতা পেল ছিটমহলের মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন