বোর্ড গঠনে রাজ্যজুড়ে অশান্তি, ঝাড়গ্রামের কাছে উদ্ধার নলিকাটা দেহ

বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “তৃণমূলের কে প্রধান হবেন, সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে চন্দন খুন হয়েছেন।” সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কেরও মত, “প্রধান নির্বাচন ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাপা দিতে খুনের ঘটনায় বিরোধীদের নাম জড়াচ্ছে তৃণমূল।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:০৫
Share:

নিথর: মেঠো রাস্তার ধারে ধানখেতে তৃণমূলকর্মী চন্দন ষ়ড়ঙ্গীর দেহ। পাশে পড়ে তাঁর মোটরবাইক। মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের কাছে। নিজস্ব চিত্র।

মেঠো রাস্তার ধারে ধানখেত। সেখানেই পড়ে রক্তাক্ত দেহ। গলার নলি কাটা, বাঁ হাতে গভীর ক্ষত। চারপাশে চাপ চাপ রক্ত। ধানগাছের গোড়ার জল পর্যন্ত লাল।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে ঝাড়গ্রাম শহরের অদূরে সত্যারডিহিতে পাওয়া এই দেহ জঙ্গলমহলের অতীত উস্কে দিয়েছে। খুন হয়েছেন তৃণমূলের জামবনি ব্লক কমিটির সদস্য পবিত্র ওরফে চন্দন ষড়ঙ্গী (৫৫)। তৃণমূলের জমানায় প্রায় সাত বছর পরে এমন রাজনৈতিক খুন দেখল ঝাড়গ্রাম। পুলিশের অনুমান, বাইকে যাওয়ার সময় চন্দনকে ধাওয়া করে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মেরেছে আততায়ীরা। ঘটনাস্থলেই মিলেছে চন্দনের ব্যাগ ও মোবাইল। ঘটনার পরে জেলায় পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন বন্ধ করে দেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক।

কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলে হাজার হাজার সিটের মধ্যে মাত্র কয়েকটা পেয়েছে। তা নিয়েই খুনোখুনির রাজনীতি! আমাদের কর্মী চন্দনকে জামবনিতে খুন করা হয়েছে। সিপিএমের হার্মাদরাই এখন বিজেপির জল্লাদ হয়েছে।’’ বিকেলে ঝাড়গ্রামে গিয়ে দুই মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারীও বিজেপিকেই দুষেছেন। শুভেন্দু বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডের বিজেপির মদতে এ সব হচ্ছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: চোপড়ায় গুলি করে কুপিয়ে খুন

বিজেপির জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “তৃণমূলের কে প্রধান হবেন, সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে চন্দন খুন হয়েছেন।” সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক পুলিনবিহারী বাস্কেরও মত, “প্রধান নির্বাচন ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চাপা দিতে খুনের ঘটনায় বিরোধীদের নাম জড়াচ্ছে তৃণমূল।”

নিহত চন্দন ষড়ঙ্গী

২০০২ সালে জামবনির বালিজুড়িতে গুলি করে তির মেরে খুন করা হয়েছিল চন্দনের বাবা, কংগ্রেস সমর্থক মোহিনীমোহন ষড়ঙ্গীকে। সেই ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল সিপিএমের বর্তমান দুবড়া এরিয়া কমিটির তাপস মল্লিকের। চন্দন খুনেও সেই তাপসের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেছেন নিহতের মেজদা প্রসূন ষড়ঙ্গী। সব মিলিয়ে অভিযুক্ত সিপিএম ও বিজেপি-র মোট আটজন। মূল অভিযুক্ত তাপস পেশায় শিক্ষাকর্মী। তাঁকে কর্মস্থল দুবড়ার একটি স্কুল থেকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ। জেলার তৃণমূল নেতা প্রসূন বলেন, “পূর্ব পরিকল্পনা মতো ভাইকে খুন করা হয়েছে। দুবড়া পঞ্চায়েত গঠনের আগে সন্ত্রাস ছড়াতে সিপিএম-বিজেপি জোট
এটা করেছে।’’

একটি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতায় দুবড়ায় বোর্ড এখনও হয়নি। সাতটি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে চারটি, দু’টিতে বিজেপি ও একটিতে সিপিএম জিতেছে। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে জট কাটায় কিছুদিনের মধ্যেই প্রধান নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। তার আগে শাসকদলে চলছিল বিরোধ। তৃণমূলের অন্দরের খবর, জামবনিতে জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি দেবনাথ হাঁসদা ও দলের এসটি সেলের জেলা সভাপতি অর্জুন হাঁসদার অনুগামীদের দ্বন্দ্ব রয়েছে। দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে সদ্ভাব থাকলেও দেবনাথের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল চন্দনের। বালিজুড়ি থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী চন্দন ঘনিষ্ঠ দেবেন সরেনকে প্রধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু বিরুদ্ধ গোষ্ঠী বেলিয়া পূর্ব সংসদে নির্বাচিত চৈতন মুর্মুকে প্রধান করতে উঠেপড়ে লেগেছিল।

বাবার মৃত্যুর পর থেকে চন্দনরা ঝাড়গ্রাম শহরে থাকতেন। তবে রোজই দুবড়ায় যেতেন চন্দন। ফিরতেন রাতে। সোমবার সন্ধ্যায় দলীয় বৈঠক শেষের পরে বৃষ্টিতে আটকে পড়েন তিনি। রাত ন’টাতেও না ফেরায় চন্দনের কলেজ পড়ুয়া ছেলে দীপাঞ্জন বাবাকে ফোন করেন। ফোন বেজে যায়।

স্বামীর পরে খুনোখুনির রাজনীতিতে ছেলেকে হারিয়ে ভক্তিলতা ষড়ঙ্গীর মুখে একটাই কথা, ‘‘কত আর সইতে হবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন