মরণকূপ। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের অবস্থা এখন এমনই। ছবি: দীপঙ্কর দে।
দু’হাত অন্তর বড় বড় গর্ত। যেন সাক্ষাৎ মরণফাঁদ!
কোনও সাধারণ রাস্তা নয়। হুগলির ডানকুনি থেকে বর্ধমানের পালসিট পর্যন্ত বিস্তৃত রাজ্যের অন্যতম ব্যস্ত জাতীয় সড়ক দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের এখন এমনই অবস্থা। মসৃণ ভাবে যে রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা, সেখানে এখন পদে পদে ব্রেক কষছে গাড়ি। ফলে, ঘটছে দুর্ঘটনা। খারাপ হচ্ছে গাড়ি। পরিস্থিতি আরও শোচনীয় এবং বিপজ্জনক হয়ে পড়ছে রাতে। আর তার সঙ্গে বৃষ্টি নামলে তো কথাই নেই! প্রশ্ন হল, মোটা টাকা ‘টোল’ দিয়ে যে সড়ক ব্যবহার করতে হয়, সেখানে এ ভাবে ঝুঁকি নিয়ে কেন যাতায়াত করতে হবে?
মাস কয়েক আগে সড়কের একই হাল হওয়ায় কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তা সারিয়েছিল জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বর্ষা নামতেই আবার যে কে সেই! ফিরে এসেছে বড় বড় গর্ত। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সেই সব গর্ত আড়ে-বহরে বেড়েছে। এক-একটি গর্ত যেন জল ভরা গামলা! ফলে, দুর্ঘটনাও বেড়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেই ডানকুনির মাইতিপাড়া থেকে চৌমাথার মধ্যে ওই সড়কে গর্তে পড়ে যন্ত্রাংশ ভেঙে তিনটি ট্রাক আটকে পড়ে। তার জেরে ওই সড়ক তো বটেই, পাশের দিল্লি রোডেও ছড়িয়ে পড়ে যানজট। নাকাল হন সাধারণ মানুষ।
কখনও ‘লেন’ ভাঙা গাড়ির কারণে, কখনও গ্রামবাসীদের গরু-ছাগল নিয়ে যাতায়াতের কারণে, কখনও রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের কারণে এমনিতেই বছরভর দুর্ঘটনা লেগে থাকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। তার উপরে এই বর্ষায় রাস্তার হাল যেন গোদের উপরে বিষফোড়া! ইতিমধ্যেই সমস্যার কথা জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন হুগলির পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী।
ওই পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন ডানকুনির বিজন দাস। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমরা টোল দিয়ে যাই। কিন্তু আমাদের প্রাণ নিয়ে কেন ছিনিমিনি খেলবে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ? রাস্তা তৈরির মান ঠিক না হলে এই হাল তো হবেই।’’
কী বলছে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ?
সংস্থার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘বেশি বৃষ্টি বিটুমিনের শত্রু। যে জায়গাগুলো সারানো হয়েছিল দেখা যাচ্ছে, বর্ষায় আবার তা নষ্ট হচ্ছে। তবে দ্রুত রাস্তা সারিয়ে তোলা হবে।’’ কিন্তু বৃষ্টি বেশি হলেও রাস্তার যাতে ক্ষতি না হয়, সেই ব্যবস্থা করা হয়নি কেন, এই প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন।
সমস্যাটা আরও তীব্র বর্ধমানের অংশে। খানাখন্দ তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে পানাগড় থেকে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলায় প্রতিদিন যে যানজট হচ্ছে, তার প্রভাব পড়ছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতেও। প্রবল বৃষ্টিতে রাস্তায় জল জমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হয়েছে। বুধবার রাতে কলকাতা থেকে গাড়িতে ফিরছিলেন দুর্গাপুরের বনাধিকারিক মিলন মণ্ডল। যানজটে আটকে পড়েন পানাগড়ে। বাড়ি পৌঁছনোর কথা ছিল রাত ১০টা নাগাদ। পৌঁছলেন আরও দু’ঘণ্টা পরে। তাও জাতীয় সড়ক ছেড়ে অন্য রাস্তা ধরে।
বর্ষার মরসুম শেষ হতে এখনও বেশ কিছুদিন বাকি। তার মধ্যে যে ওই রাস্তায় প্রাণ হাতে করেই যাতায়াত করতে হবে, তা এক রকম ভবিতব্য বলেই ধরে নিচ্ছেন যাত্রীরা।