ভাগাড়-কাণ্ডে পোলট্রির ক্ষতি ৪০০ কোটি

খুচরো বাজারেও জ্যান্ত মুরগি বিক্রি ব্যাপক ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। সব কিছুর মূলে আছে সাম্প্রতিক ভাগাড়-কাণ্ড। তার জেরে এ-পর্যন্ত পোলট্রি শিল্পের কমবেশি ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশন।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৮ ০৫:০৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

হোটেল-রেস্তরাঁয় মুরগির মাংস কম বিকোচ্ছে। এমনকি সরকারি অনুষ্ঠানেও মুরগির মাংস কার্যত বাতিল। খুচরো বাজারেও জ্যান্ত মুরগি বিক্রি ব্যাপক ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। সব কিছুর মূলে আছে সাম্প্রতিক ভাগাড়-কাণ্ড। তার জেরে এ-পর্যন্ত পোলট্রি শিল্পের কমবেশি ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ পোলট্রি ফেডারেশন।

Advertisement

রাজ্যে পোলট্রি শিল্পে বছরে ছ’হাজার কোটিরও বেশি টাকার লেনদেন হয়। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বাজার খানিকটা ঘুরে দাঁড়ালেও চাহিদা এখনও স্বাভাবিক হয়নি বলে জানাচ্ছেন খামার-মালিকেরা। রাজ্যে মাংসের জোগান দিতে প্রতি সপ্তাহে গড়ে এক কোটি ব্রয়লার মুরগি লাগে। তার মধ্যে কলকাতা ও হাওড়ার বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতে প্রতি সপ্তাহে জোগান দিতে হয় গড়ে ৩৫-৪০ লক্ষ মুরগি। কিন্তু এখন কলকাতাতেই সপ্তাহে ২২-২৫ লক্ষের বেশি মুরগি লাগছে না। শুক্রবার পাইকারি বাজারেও প্রতি মুরগির দাম ৬৫-৬৭ টাকা কিলোগ্রামে নেমে যায়। গরমে মুরগি বড় করতে খামার-মালিকদের প্রতি কেজিতে ৮০-৮২ টাকা উৎপাদন খরচ পড়ে। তাঁরা জানাচ্ছেন, অন্যান্য বছর গরমের সময় মুরগির পাইকারি দর থাকে ১০০ টাকার (প্রতি কিলোগ্রাম) উপরে। ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে ৩৩-৩৫ টাকা কম দামে মুরগি বিক্রি করে দিতে হচ্ছে।

ফেডারেশনের সধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি বলেন, ‘‘মরা মুরগির মাংস নিয়ে ব্যবসার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে বাজার পড়ে যাওয়ায় গ্রামাঞ্চলেই উৎপাদন খরচের থেকে অনেক কম দামে মুরগি বিক্রি করতে হয়েছে আমাদের। কেজি ৫০-৫৫ টাকা কেজিতে খামারের মুরগি বেচে দিতে হয়। আমাদের প্রাথমিক হিসেবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে পোলট্রি শিল্পে।’’ দাম কমে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা দেদার মুরগি খেয়েছেন এবং সেই সূত্রে পোলট্রি-মালিকেরা খানিকটা হলেও টাকা তুলতে পেরেছেন বলে জানাচ্ছেন তিনি।

Advertisement

ভাগাড়-কাণ্ডের পরে মাংস বিক্রিতে সরকারের নজরদারি বেড়েছে। পুরসভাগুলিও প্রতিদিন বিভিন্ন হোটেল, রেস্তরাঁয় অভিযান চালাচ্ছে। মাংস বিক্রিতে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ চালু করেছে কলকাতা পুরসভা। তার উপরে শহরবাসী বাইরে মুরগির পদ খাওয়া অনেকটা কমিয়ে দেওয়ায় সার্বিক প্রভাব পড়ছে রাজ্যের পোলট্রি শিল্পে। সারা রাজ্যে কমপক্ষে ছ’লক্ষ মুরগি চাষি এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

প্রশ্ন উঠছে, পাইকারি বাজারে মুরগির দম এত কমে যাওয়া সত্ত্বেও শহরের খুচরো বাজারগুলিতে কাটা মুরগির দাম অনেকটাই বেশি কেন? পোলট্রি ফেডারেশনের বক্তব্য, তারা সব সময়েই খুচরো বিক্রেতাদের ঠিক দামে মাংস বেচতে অনুরোধ করে। কত দামে বিক্রি হওয়া উচিত, তা-ও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে জানিয়ে দেয়। নাগেরবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রণব দে বলেন, ‘‘খুচরো বাজারে কে, কী দামে মাংস বা অন্যান্য জিনিস বিক্রি করবে, তা আমরা ঠিক করে দিতে পারি না। এটা ব্যবসায়ীদের নিজস্ব ব্যাপার।’’ অনেকটা একই মত কলকাতার অন্য বাজার সমিতিগুলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন