বঙ্গ গরিমার গল্পে মাতিয়ে দিলেন প্রণব

এ দিন সাহিত্য উৎসবের মঞ্চটি যেন একই সঙ্গে হয়ে উঠেছিল ভারতরত্ন বঙ্গসন্তানের সংবর্ধনা মঞ্চও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৫
Share:

সৌজন্য: বইমেলায় সাহিত্য উৎসবের উদ্বোধনে শঙ্খ ঘোষ ও প্রণব মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

‘দিদি’-র পরে এ বার ‘দাদা’র দাপট দেখল কলকাতা বইমেলা!

Advertisement

উদ্বোধনী আসরে বইমেলার হয়ে জোরদার ব্যাট করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতটাই যে, উদ্বোধনে বইমেলা হয়ে উঠেছিল মমতাময়। একা মমতারই সাতটি বই প্রকাশিত হয় ৩১ জানুয়ারি মেলার বোধনে। সেটা ছিল বৃহস্পতিবার। আর ৭ ফেব্রুয়ারি, বৃহস্পতিবার সেই বইমেলাকে কেন্দ্র করে তিন দিনের সাহিত্য উৎসবের সূচনায় পুরোভাগে দেখা গেল প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, সদ্য ভারতরত্ন প্রণব মুখোপাধ্যায়কে।

এ দিন সাহিত্য উৎসবের মঞ্চটি যেন একই সঙ্গে হয়ে উঠেছিল ভারতরত্ন বঙ্গসন্তানের সংবর্ধনা মঞ্চও। আবার গুয়াতেমালা, কিউবার সাহিত্যিক-সাংবাদিক, রুশ দেশের প্রকাশনা-কর্তাদের সামনে প্রণববাবুই মেলে ধরলেন বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির গরিমা। পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের ২০ কোটি বাঙালি এবং উপমহাদেশ ও অন্যত্র ছড়িয়ে থাকা বঙ্গভাষীদের গল্প সকলকে শোনালেন তিনি।

Advertisement

বইমেলার ‘প্রিয় দাদা’ বলে প্রণববাবুর সঙ্গে মেলার বহু যুগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা মনে করালেন বুকসেলার্স অ্যান্ড পাবলিশার্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়। প্রবাদবাক্য ‘কত ভঙ্গ বঙ্গদেশ, তবু রঙ্গে ভরা’র ধরতাই দিয়ে বলতে শুরু করেন প্রণববাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বইমেলাও এখন বঙ্গজীবনের একটি প্রধান উৎসব।’’ এখন আর ঘুরে ঘুরে বইয়ের পাতা উল্টে সারা দিন কাটাতে পারেন না বলে তাঁর যে আফসোস হয়, তা-ও জানান প্রণববাবু।

ভারতরত্ন শিরোপার জন্য তিনি কতটা কৃতজ্ঞ, মেলার মঞ্চে সেটাও জানান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, ‘‘চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারীর পরে সিভি রামন, জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গাঁধীরা যে-সম্মান পেয়েছেন, তা পেয়ে আমি ধন্য। এই সংবর্ধনা আমি বিনম্র চিত্তে গ্রহণ করছি।’’ কবি-সাহিত্যিক শঙ্খ ঘোষ, সমরেশ মজুমদারদের উপস্থিতিতে বাংলা ভাষার চর্যাপদের যুগ থেকে হাজার বছরের অভিযাত্রার কথাও শোনান প্রণববাবু। উঠে আসে চণ্ডীদাসের কবিতায় মানবতার বাণী থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা।

বইমেলায় লাখো মানুষের সমাগমে সাহিত্য উৎসবকে সাধারণের উৎসব হিসেবে তুলে ধরার কথা বলেন উৎসব-অধিকর্ত্রী সুজাতা সেন। বইমেলার মাঠ যথারীতি জনতার নানা মতের মোহনা। ছোট্ট স্টলে তথ্য জানার অধিকার নিয়ে নাগরিকদের সজাগ করছেন উৎসাহী সমাজকর্মীরা। খড়্গপুর আইআইটি-র স্টলে নিখরচায় ন্যাশনাল ডিজিটাল আর্কাইভ লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার সুযোগ সকলের সামনে। সদস্য হয়ে সত্যজিৎ রায়ের চিত্রনাট্য, বিশ শতকের গোড়ার খবরের কাগজ বা বিজ্ঞানচর্চায় ডুব দেওয়া যাবে।

সাহিত্য উৎসবের অনেক তর্কই এ বার সভাঘর ছাড়িয়েও সজীব। কাশ্মীরি গ্রাফিক নভেলিস্ট মালিক সাজাদ, কমিকসে নয়া পুরাণকার আপ্পুপেন, কমিকসের মহাভারতকার শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রচ্ছদশিল্পী-অধ্যাপক পিনাকী দে-র আড্ডা যেমন মুক্তমঞ্চের পরিসরেও ছ়ড়িয়ে পড়ল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন