Anubrata Mondal

কলকাতার পথে কেষ্টর পিছু পিছু ওঁরা কারা? শক্তিগড়ে তিন জনের সঙ্গে নিভৃতে কথা অনুব্রতের

শক্তিগড়ের রেস্তরাঁয় অনুব্রত মণ্ডলের টেবিলে আরও তিন ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। প্রশ্ন উঠছে, ওই তিন ব্যক্তি কারা, কেনই বা তাঁরা অনুব্রতের টেবিলে এসে বসেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শক্তিগড় শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ ১২:১৮
Share:

অনুব্রতের টেবিলে তিন ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে জোর জল্পনা। নিজস্ব ছবি।

কলকাতায় যাওয়ার পথে বর্ধমানে শক্তিগড়ের রেস্তরাঁয় প্রাতরাশ সেরেছেন অনুব্রত মণ্ডল (কেষ্ট)। সেই রেস্তরাঁর তৃণমূল নেতার টেবিলে আরও তিন ব্যক্তির উপস্থিতি নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা।

Advertisement

আদালতের নির্দেশ মতো মঙ্গলবার দোলের দিন সকালে অনুব্রতকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয় আসানসোল জেল কর্তৃপক্ষ। পথে শক্তিগড়ে এক বার থামে বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতিকে নিয়ে যাওয়া কনভয়। সেখানে একটি দোকানে প্রাতরাশ সারেন অনুব্রত। রাস্তার ধারের ওই রেস্তরাঁয় তিনি ঢোকার কিছু ক্ষণ পরেই তিন ব্যক্তিকে তাঁর টেবিলে গিয়ে বসতে দেখা যায়। তাঁদের এক জনের পরনে ছিল কচি কলাপাতা রঙের লম্বা ঝুলের কলার উঁচু পাঞ্জাবি। আর এক জন ফুল স্লিভ টি-শার্ট পরেছিলেন। তৃতীয় জনের পরনে ছিল কালো ফুল স্লিভ শার্ট। তাঁদেরও অনুব্রতের সঙ্গে জলখাবারে কচুরি, ছোলার ডাল, ল্যাংচা ও রাজভোগ খেতে দেখা যায়। খেতে খেতে ওই তিন জনের সঙ্গে অন্তত আধ ঘণ্টা ধরে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে তৃণমূল নেতাকে। ওই তিন ব্যক্তি কারা, কেনই বা তাঁরা অনুব্রতের টেবিলে এসে বসেছিলেন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য।

সূত্রের দাবি, অনুব্রতের টেবিলে যাঁদের দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তির নাম কৃপাময় ঘোষ। যিনি অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। গরু পাচার মামলায় ধৃত সহগল হোসেনের মতো তিনিও কেষ্টর ‘ছায়াসঙ্গী’। আর টি-শার্টি পরা ব্যক্তি হলেন তুফান মিদ্দা। তিনি অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলের গাড়িচালক। ওই সূত্রেরই দাবি, ডব্লু৪১এইচ০০৭— এই নম্বরের গাড়ি করেই ওই তিন ব্যক্তি শক্তিগড়ে এসেছেন। ঘটনাচক্রে, ডব্লু৪১এইচ০০৭ নম্বরের গাড়িটি অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মলয় পিটের বলেই দাবি। গরু পাচার মামলায় তৃণমূল নেতা গ্রেফতার হওয়ার পর সেই মলয়কে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের সূত্রে আগেই জানা গিয়েছে, গত এক দশকে উল্কার গতিতে উত্থান হয়েছে মলয়ের। বিভিন্ন রাজ্যে মলয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজও রয়েছে খাস শান্তিনিকেতনে। অনুব্রতকে নিয়ে টানাপড়েনে আবারও উঠে এল সেই মলয়ের নাম। যা ওই তিন ব্যক্তিকে ঘিরে তৈরি হওয়া রহস্যকে আরও জোরাল করেছে।

Advertisement

যদিও গাড়ি ‘জোগান দেওয়ার’ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মলয়। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি সংস্থার প্রেসিডেন্ট। আমার সংস্থার গাড়ি কোথায় কোথায় যায়, তা তো আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।’’

তিন ব্যক্তি যে গাড়িতে করে শক্তিগড়ে এসেছেন, সেটি মলয় পিটের গাড়ি বলে দাবি। নিজস্ব ছবি।

কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই আসানসোলের জেল থেকে কলকাতার হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে অনুব্রতকে। ওই নিরাপত্তা বলয় পেরিয়ে কী ভাবে ওই তিন ব্যক্তি কেষ্টর সঙ্গে দেখা করলেন, তাঁর সঙ্গে আধ ঘণ্টা মতো কথা বললেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

প্রসঙ্গত, গত বছর অগস্টে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে জেলবন্দি অনুব্রতকে দেখতে মাঝে মাঝে দলের নেতা-কর্মীদের আসতে দেখা যেত। বিচারক যখন এজলাসে থাকতেন না, জেলার নেতারা এসে কেষ্টর সঙ্গে কথা বলে যেতেন। দলীয় সূত্রে দাবি, জেলা সভাপতিও তাঁদের ‘রাজনৈতিক পরামর্শ’ দিতেন। পঞ্চায়েত ভোটের আগে কী কী দলীয় কর্মসূচি নেওয়া যেতে পারে, তা-ও বাতলে দিতেন। কিন্তু শক্তিগড়ের রেস্তরাঁয় পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে অনুব্রতের সঙ্গে তিন ব্যক্তির নিভৃতে কথা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে বলেই মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন