‘বাংলা’ নিয়ে গরজ নেই, ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলে আপত্তি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার, কাকতালীয় হলেও রাজ্যের নাম বদল নিয়ে মমতার প্রস্তাবে সায় নেই মোদীর। এই গেরোয় আপাতত ‘বাংলা’ হতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:০২
Share:

ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলে আপত্তি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার, কাকতালীয় হলেও রাজ্যের নাম বদল নিয়ে মমতার প্রস্তাবে সায় নেই মোদীর। এই গেরোয় আপাতত ‘বাংলা’ হতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ।

Advertisement

কেন্দ্রের এই মনোভাবে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে, কেন্দ্র ঝুলিয়ে রাখলে এ বার সাধারণ মানুষই সব জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের বদলে রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ লিখতে শুরু করবে।

রাজ্যের নাম বদল করতে গত অগস্টে বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ হয়েছে। তার পর চার মাস কেটে গেলেও সংসদে সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব এনে তা কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্য প্রশাসনের অভিযোগ, এই নিয়ে নবান্নের তরফে বার কয়েক তাগাদা দেওয়া হলেও কোনও লাভ হয়নি। এই আবহে রাজ্যের নাম পরিবর্তন নিয়ে আরও একপ্রস্ত লড়াইয়ের আশঙ্কা করছেন নবান্নের কর্তারা।

Advertisement

কেন রাজ্যের নাম পরিবর্তন চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী?

নবান্নের বক্তব্য, গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি আন্তঃরাজ্য পরিষদের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছিলেন মমতা। দশ বছর পরে ওই বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। রাজ্যের নাম ডব্লিউ (ওয়েস্টবেঙ্গল) দিয়ে শুরুহওয়ায় সেখানে সব শেষে বলার সুযোগ পান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এতে বিরক্ত হন মমতা। সারা দিন অন্য মুখ্যমন্ত্রীদের বক্তৃতা শুনতে হলেও তিনি বলার জন্য বেশি সময় পাননি।

এর পরেই ২ অগস্ট রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলায় ‘বাংলা’ এবং ইংরেজিতে ‘বেঙ্গল’ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিধানসভায় প্রস্তাব এনে পাশও করিয়ে নেওয়া হয়। যদিও বিরোধীরা প্রস্তাব সমর্থন করেনি। সিপিএম একটিই নাম ‘বেঙ্গল’ রাখার প্রস্তাব করে। বিজেপি নাম বদলের বিরোধিতা করে। কংগ্রেসও নাম বদলের বিরোধিতায় বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করে। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় প্রস্তাব পাশ হতে অসুবিধা হয়নি।

নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব এর পরে নিয়ম মেনে পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের নাম পরিবর্তন করার জন্য কেন্দ্রকে সংবিধান সংশোধনী বিল আনতে হবে। সেখানেই রাজ্যের নাম নতুন করে নথিভুক্ত করতে হবে। সম্প্রতি তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সায় দিলেও পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাব নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার পাল্টা যুক্তি, ‘‘সংসদই অচল হয়ে রয়েছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিল তো পেশই করা যায়নি।’’ বাজেট অধিবেশনেও নাম পরিবর্তনের বিল সংসদে আনার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়ে দেন তিনি। ওই কর্তার কথায়, ওই প্রস্তাব সর্বসম্মত নয়। বিধানসভাতেই বিরোধিতা হয়েছে। তাই সব দিক দেখে সিদ্ধান্ত হবে।

রাজ্যের নাম বদলাতে চেয়ে আগেও দু’বার প্রস্তাব গিয়েছিল। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ইংরেজিতেও ওয়েস্ট বেঙ্গলের পরিবর্তে ‘পশ্চিমবঙ্গ’ রাখার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। মমতা ক্ষমতায় এসে তা পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু কোনও প্রস্তাবই কার্যকর করেনি কেন্দ্র।

কেন্দ্র যে সায় দেবে না, ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বুধবার তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য চাইলেই নাম বদলাবে না। এ ভাবে দেশভাগের যন্ত্রণা ভুলিয়ে দিতে দেব না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement