ছবি: সংগৃহীত।
ঝাঁপ বন্ধ করতে চলেছে রাজ্যের একটি নতুন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ।
মেডিক্যাল শিক্ষার ব্যবসায় এ রাজ্যে কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছিল তারা। কিন্তু দু’বছর অপেক্ষার পরেও সেই বিনিয়োগের কোনও সুফল দেখতে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চেষ্টায় ইতি টানছেন কর্তৃপক্ষ। এর জন্য ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)-র নীতিকেই দুষছেন ‘বজবজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’ (বিবিআইটি) গ্রুপের কর্তারা।
বছর তিনেক আগে বজবজের বুঁইতা অঞ্চলে প্রায় ২২ একর জমি কিনে ১৫০ আসনের মেডিক্যাল কলেজের (জগন্নাথ গুপ্ত ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল) নির্মাণ শুরু করে ওই শিল্পগোষ্ঠী। এ রাজ্যে তাদের একাধিক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও পলিটেকনিক কলেজ রয়েছে। রয়েছে অন্য ব্যবসাও। মেডিক্যাল কলেজ-সংলগ্ন ৩৮০ শয্যার হাসপাতালও চালু হয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা এবং দিল্লিতে দফায় দফায় দরবার করেও মেডিক্যাল কলেজ চালুর ব্যাপারে এমসিআই-এর অনুমোদন জোগাড় করতে পারেনি তারা। ফলে এখন ওই মেডিক্যাল কলেজ বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর জন্য মল্লিকবাজারের ‘ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস’-এর সঙ্গে কথাবার্তা প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছে। সব ঠিক থাকলে তারাই বজবজের মেডিক্যাল কলেজটি কিনে নেবে। তার পরে সেখানে মেডিক্যাল কলেজ থাকবে, না কি নিউরোসায়েন্সের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হবে, সেটা এখনও ঠিক হয়নি। নিউরোসায়েন্সের তরফে রামপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘কথাবার্তা অনেকটাই এগিয়েছে। কিছু নিয়মকানুন, শর্ত নিয়ে শেষ পর্যায়ের কথোপকথন চলছে।’’
বিবিআইটি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণকুমার গুপ্ত বলেন, ‘‘অনেক আশা নিয়ে আমরা এতটা বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু এমসিআই-এর কড়াকড়িতে এগোতে পারছি না। খুব কষ্টে পড়ে তবেই মেডিক্যাল কলেজ বিক্রির কথা ভাবছি। কত দিন আর এতগুলো টাকা আটকে রাখা যায়?’’
কৃষ্ণকুমারবাবুর অভিযোগ, ‘‘ছোট ছোট কারণ দেখিয়ে এমসিআই আমাদের অনুমোদন দিচ্ছে না। শিক্ষক-চিকিৎসক পাওয়া যে এত সহজ নয়, তা ওদেরও বুঝতে হবে। এ ভাবে পশ্চিমবঙ্গের পাঁচটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজকে এ বছর ওরা আটকেছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘ছাত্র ভর্তি করা যাচ্ছে না, ফলে ফি-ও নেওয়া যাচ্ছে না। অথচ, এত বড় হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। এটা বছরের পর বছর সম্ভব নয়।’’
এমসিআই ভেঙে দিয়ে ‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন’ (এনএমসি) গঠনের বিলে গত শুক্রবার সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্র। চলতি অধিবেশনেই বিলটি সংসদে পেশ হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। বিলটি আইনে পরিণত হলে এই কমিশনই হবে মেডিক্যাল শিক্ষার নিয়ন্ত্রক। ফলে পরিস্থিতি আমূল বদলাতে পারে। তা হলে কি দিন পরিবর্তনের অপেক্ষা করবেন? কৃষ্ণকুমারবাবুর উত্তর, ‘‘সংসদে পাশ হয়ে আইন হতে হতে অনেক সময় লেগে যাবে। তার পরেও কী হবে, ঠিক নেই। তাই সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছে না।’’
কেন অনুমোদন পেল না ওই মেডিক্যাল কলেজ? এমসিআই-এর এক প্রতিনিধির কথায়, ‘‘আমরা গত জানুয়ারি আর সেপ্টেম্বর— দু’বার ওই মেডিক্যাল কলেজ পরিদর্শনে যাই। দু’বারই প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষক-চিকিৎসক অনেক কম পেয়েছি। বেলা ১১টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ৩০-৩৫ শতাংশের বেশি চিকিৎসককে দেখতে পাইনি। অস্ত্রোপচারের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো কম। এ ভাবে অনুমোদন পাওয়া যায় না।’’
আগে ম্যানেজমেন্ট কোটায় ইচ্ছেমতো ক্যাপিটেশন ফি নিয়ে ভর্তি করা যেত বলে মালিক পক্ষের মোটা লাভ হত। এখন ‘নিট’ জমানায় সেই পথ প্রায় রুদ্ধ। শোনা যাচ্ছে, নতুন কমিশন বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলির ৪০ শতাংশ আসনে ভর্তির ফি বেঁধে দেবে। তাতে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলি আরও শঙ্কিত। হলদিয়ার একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ যেমন সরকারের কাছে ম্যানেজমেন্ট কোটা ও সরকারি কোটায় ফি বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে। সেখানকার কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘এটা না হলে আমরাও হয়তো চালাতে পারব না।’’ দুর্গাপুরের এক বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ফের ছাত্র-ভর্তির ফি বাড়ানোর জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে।