বারবার চ্যালেঞ্জ, জয়ী বিজয়াই

পরপর দুর্ভাগ্যের আঘাত। প্রতিবারই নতুন করে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার লড়াই। হার না-মেনে এগিয়েই চলেছেন তিনি। তাঁর নামই যে বিজয়া। বিএ পাশ করার পরে আর্টস কলেজে ভর্তি হন বিজয়া মিশ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
Share:

রং-তুলিতে মগ্ন শিল্পী। ছবি: প্রকাশ পাল।

পরপর দুর্ভাগ্যের আঘাত। প্রতিবারই নতুন করে প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার লড়াই। হার না-মেনে এগিয়েই চলেছেন তিনি। তাঁর নামই যে বিজয়া।

Advertisement

বিএ পাশ করার পরে আর্টস কলেজে ভর্তি হন বিজয়া মিশ্র। কয়েক বছর পরেই আর্থারাইটিসে শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। চিকিৎসায় তেমন লাভ হয়নি। শেষে টিভিতে প্রাণায়মের অনুষ্ঠান দেখে বাড়িতে নিজেই অনুশীলন শুরু করেন। ধীরে ধীরে হাঁটাচলার চেষ্টা করতে শুরু করেন। ঠিক করেন, হরিদ্বারে একটি প্রাণায়ম শিবিরে যাবেন।

সেখানে ঘটে আর এক বিপর্যয়। ট্রেন থেকে নেমে শিবিরে যাওয়ার জন্য গাড়ি দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হ’ন বিজয়া। বাঁ’হাতের কনুই ভাঙে, কমজোরি পা ফের জখম হয়। বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল বাদ পড়ে। কার্যত প্রায় সাড়ে তিন মাস হাসপাতালে থেকে ফিরে এসে নিজের পায়ে আর হাঁটতে পারেননি।

Advertisement

শ্রীরামপুরের আড্ডি লেনের বাসিন্দা বিজয়া লড়াইয়ের জন্য নিজেকে তৈরি করে ফেলেন তখনই। শ্রীরামপুরের চেশায়ার হোমে ফিজিওথেরাপি শুরু করেন। স্থির করেন, শিল্পে নিজেকে উজাড় করে দেবেন। প্রথম ছবিটি পেন্সিল স্কেচ, চেশায়ার হোমের তৎকালীন ইন-চার্জ সিস্টার লিন্ডার। তারপর রং-তুলি নিয়ে ক্যানভাসে ছবি আঁকা চলে।

স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ গেমস ভিলেজে তাঁর আঁকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি টাঙানো হয়েছিল। তৎকালীন এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সেটি তিনি নিজের দফতরে টাঙিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে নরেন্দ্র মোদী-সহ অনেককেই পোর্ট্রেট এঁকে উপহার দিয়েছেন তিনি। দেখা করেছেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠির সঙ্গেও। কলকাতায় গগনেন্দ্র প্রদর্শশালা, চিত্রকূট আর্ট গ্যালারিতে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। আজ মধ্য চল্লিশে পৌঁছে তাঁর চোখে আরও বড় শিল্পী হওয়ার স্বপ্ন।

বাবা ওমপ্রকাশ, ভাই অতুল, ভাইয়ের স্ত্রী সুনীতা আর ভাইপো শিবমের সঙ্গে থাকেন বিজয়া। ২০১২ সালে নিজের মতো চলচ্ছক্তিহীন ছেলেমেয়েদের আঁকা শেখাতে তিনি খুলে ফেলেন সংস্থা। জনা কুড়ি ছাত্রছাত্রী পেয়েছিলেন। জীবন অনেকটাই যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, ফের চ্যালেঞ্জ হয়ে এল ক্যান্সার। জরায়ু কেটে বাদ দিতে হয়। কেমোথেরাপি চলে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বার অস্ত্রোপচার করাতে হয়। বিজয়ার কথায়, ‘‘যন্ত্রণায় কুঁক়ড়ে যেতাম। কিন্তু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়িনি কখনও। জানেন, ক্যান্সার থেকে আমি এখন মুক্ত।’’ নিজের সংস্থার কাজ ফের শুরু করতে এখন আবার কোমর বাঁধছেন বিজয়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন