জখম সন্দীপ নাগ। (ডান দিকে) রাতারাতি খুলে ফেলা হয়েছে পানশালার বোর্ড। ছবি :রামপ্রসাদ সাউ ।
অন্য এলাকার লাইসেন্স নিয়ে পাড়ার মধ্যে রমরমিয়ে পানশালা চলা নিয়ে সরব হয়েছিলেন এলাকাবাসী। খড়্গপুর মালঞ্চের চণ্ডীপুরের ওই পানশালার সামনে মদ্যপদের কটূক্তির প্রতিবাদ করায় এ বার এক যুবককে মারধরের অভিযোগ উঠল।
ঘটনাটি শুক্রবার রাতের। যাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ, সেই বেসরকারি সংস্থার কর্মী সন্দীপ নাগের বাড়ি একেবারে পানশালার পাঁচিল ঘেঁষা। অভিযোগ, রাতে সন্দীপদের বাড়ির সামনে মদ্যপ একদল যুবকের জটলা চলছিল। কাজ সেরে বাড়িতে ঢোকার মুখে ওই জটলা থেকে কটূক্তি কানে আসে সন্দীপের। তিনি প্রতিবাদ করলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বাবু খান, গুলবর খান ও চিরঞ্জীবী নামে তিন যুবকের হাতে মার খেয়ে সন্দীপের হাত ভাঙে, কেটে যায় ঠোঁট। ওই মারধরের সময় পানশালার মালিক সুখেন্দু মিত্র ও তাঁর ভাই নন্দন মিত্র উপস্থিত ছিলেন বলে খবর।
ঘটনার খবর পেয়ে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে যান। দোকান বন্ধ করে চলে যান দুই মালিক। তবে স্থানীয়রা বাবু খানকে ধরে ফেলে। টাউন থানায় খবর দেওয়া হলে পুলিশ এসে খড়্গপুর গ্রামীনের কপোতিয়ার বাসিন্দা বাবুকে আটক করে নিয়ে যায়। রাতেই থানায় পানশালার মালিক সুখেন্দু মিত্র, নন্দন মিত্র-সহ পাঁচজনের নামে অভিযোগ দায়ের হয়। জখম সন্দীপকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। শনিবার হাসপাতালে হাতের এক্স-রে করা হয়। দুপুরে সেই মেডিক্যাল রিপোর্ট নিয়ে পাড়ার মহিলারা ফের টাউন থানায় গিয়ে সরব হয়। এর পরে পুলিশ ওই পাঁচজনের নামে মামলা রুজু করে। তবে রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
মালঞ্চর চণ্ডীপুরের এই পানশালার লাইসেন্সে রয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে দেওয়ানমারোর ঠিকানা। কিন্তু সেখানে নয়, পানশালাটি চলছে চণ্ডীপুরে একেবারে পাড়ার মধ্যে। মদ্যপদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট এলাকাবাসী, বিশেষ করে মহিলারা এ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন পুরসভা, এসডিপিও থেকে আবগারি দফতরে। তা নিয়ে শুক্রবারই আনন্দবাজারে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপর রাতে এই ঘটনা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, বেশ কয়েকদিন ধরেই সন্দীপের স্ত্রী জয়ন্তী পাড়ার মহিলাদের সঙ্গে ওই পানশালা বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। বিভিন্ন জায়গায় জমা দেওয়া অভিযোগে জয়ন্তীর নাম রয়েছে। তাই এলাকার বাকি মহিলাদের ভয় দেখাতে পরিকল্পিতভাবে এই হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। এমনকী হামলার আগে শুক্রবার সকালে পানশালার বাইরে ঝোলানো দেওয়ানমারো লেখা বোর্ড খুলে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। স্থানীয় বাসিন্দা অর্চনা সরকার, দীপিকা বিশ্বাসরা বলছিলেন, “আমরা বিভিন্ন মহলে জানিয়েছি। আনন্দবাজারে প্রকৃত খবর তুলে ধরা হয়েছে। সহ্য করতে পারছেন না পানশালার মালিক। আমাদের ভয় দেখাতে এ সব চলছে।’’
আক্রান্ত সন্দীপ এ দিন বলছিলেন, “বাড়ির গেট আটকে এমন গোলমাল দেখে আমি প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। ওদের সরে যেতে বলেছিলাম। ওরা অকারণে আমার মুখে ঘুষি মারল। আমি হাত দিয়ে সরিয়ে দেওয়ায় মেরে হাত ভেঙে দিল। এখন বুঝছি এ সব পরিকল্পিতভাবে সুখেন্দু নাগ ও নন্দন নাগ করিয়েছে। এ কোন রাজ্যে বাস করছি!” সুখেন্দু অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। উল্টে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওঁদের সঙ্গে তো আমার ভাল সম্পর্ক। তাও কেন এমন করছে বুঝছি না।’’
এলাকাবাসী অবশ্য ফুঁসছেন। এ দিন থানায় দাঁড়িয়ে মনিকা সরকার, নিশিথ চক্রবর্তীরা বলছিলেন, “পাড়ার মধ্যে এই মদ্যপদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে গেলে ওই পানশালা বন্ধ করতে হবে। আমরা তাই পথে নেমেছি। ভয় দেখিয়ে এই আন্দোলন বন্ধ করা
যাবে না।’’