বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলনরত চাকরিহারাদের একাংশকে চিহ্নিত করে শো কজ় করল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সাত দিনের মধ্যে তাঁদের শো কজ়ের জবাব দিতে বলা হয়েছে। শিক্ষা দফতরের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরেই এই পদক্ষেপ, জানিয়েছে পর্ষদ। গত ১৫ মে বিকাশ ভবনের সামনে আন্দোলন চলাকালীন তাঁরা কী কী বেআইনি কাজে যুক্ত হয়েছিলেন, শো কজ় চিঠিতে তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে। এই ধরনের আচরণের জবাবদিহি করতে হবে চাকরিহারা ওই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। গত শুক্রবার ১৬ মে থেকে এই চিঠি পাঠানো শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ১০ জনকে শো-কজ়ের চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আন্দোলনের অন্যতম মুখ চিন্ময় মণ্ডল, মেহবুব মণ্ডল, সুমন বিশ্বাসেরাও রয়েছেন। ২০১৪ ধারার ভিত্তিতে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
পর্ষদের চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১৫ মে বিকাশ ভবনের সামনে বহু শিক্ষক-শিক্ষিকা জড়ো হয়েছিলেন। ওই দিনের ঘটনার ছবি এবং ভিডিয়ো থেকে অনেককেই চিহ্নিত করা গিয়েছে, যাঁরা সে দিন বেআইনি কাজ করেছিলেন। বিকাশ ভবনে স্কুলশিক্ষা দফতর-সহ একাধিক সরকারি অফিস রয়েছে। অভিযোগ, বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ফেলা হয়েছিল। নষ্ট করা হয় সরকারি সম্পত্তিও। গেটে নতুন তালা ঝুলিয়ে বিকাশ ভবনের কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষকে বেআইনি ভাবে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে রাখা হয়েছিল। যাঁরা বিকাশ ভবনে কোনও পরিষেবার জন্য এসেছিলেন, তাঁদেরও হেনস্থা করা হয়। রাতে পুলিশি হস্তক্ষেপের পর বিকাশ ভবন থেকে তাঁরা বেরোতে পেরেছিলেন। সেই সময়েও তাঁদের সঙ্গে অভব্য আচরণ এবং গালিগালাজ করা হয় বলে অভিযোগ। বিক্ষোভকারীরা কেন এই ধরনের আচরণ করলেন, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, শো কজ়ের জবাবে তা জানাতে হবে। চিঠি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে চিহ্নিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে উত্তর চেয়েছে পর্ষদ।
উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এসএসসি-র ২০১৬ সালের সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তাতে ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি গিয়েছে। এই চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকারা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারবেন বলে জানায় আদালত। তার পর তাঁদের নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়ায় যোগ দিতে হবে। কিন্তু চাকরিহারারা নতুন করে পরীক্ষায় বসতে রাজি নন। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না-করেই রাজ্য আদালতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছে। মূলত এই দুই অভিযোগ নিয়ে বিকাশ ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকাশ ভবন ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে বার বার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে বিক্ষুদ্ধদের একাংশ গেট ভেঙে ঢুকে পড়েন বিকাশ ভবনের ভিতরে। গেটে নতুন তালা ঝুলিয়ে দেন তাঁরা। ভিতরে আটকে পড়েছিলেন কর্মচারী, আধিকারিক এবং সাধারণ মানুষ। রাতে লাঠিচার্জ করে তাঁদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। বার করে আনা হয় আটকে পড়া কর্মীদের। এখনও বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের জমায়েত রয়েছে। তার মাঝে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে শো কজ়ের চিঠি পাঠাতে শুরু করল পর্ষদ।