বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের অবস্থান তুলে দিচ্ছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে। —নিজস্ব চিত্র।
বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারাদের বিক্ষোভে লাঠিচার্জ করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তাঁরা অবস্থানে বসেছিলেন। রাতে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ করে। অভিযোগ, আচমকা পুলিশকর্মীদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হয় বিকাশ ভবনের সামনে। রাত ৮টা নাগাদ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে বলপ্রয়োগ করে বলে অভিযোগ। ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। রাস্তার উপর শুয়ে পড়েন অনেকে। কিন্তু তাঁদেরও টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এলাকা থেকে। একইসঙ্গে সকাল থেকে বিকাশ ভবনের যে কর্মীরা আটকে পড়েছিলেন, তাঁদের বার করে আনছে পুলিশ। তাঁরাও অনেকে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এখনও অনেকে আটকে আছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে বিকাশ ভবনের সামনে চাকরিহারা শিক্ষকেরা জড়ো হতে শুরু করেন। দফতর ঘেরাও করে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তাঁরা। বিকেলে চাকরিহারাদের তরফে মেহবুব মণ্ডল, চিন্ময় মণ্ডলেরা জানান, তাঁরা নতুন করে পরীক্ষায় বসবেন না। তাঁদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যত ক্ষণ না এসে তাঁদের আশ্বস্ত করছেন, তত ক্ষণ বিকাশ ভবনের বাইরে অবস্থান চলবে। বেরোতে দেওয়া হবে না কর্মীদের। তবে তাঁদের খাবার আটকানো হবে না।
সকাল থেকেই দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বিকাশ ভবন। পুলিশের সঙ্গে একাধিক বার ধস্তাধস্তি হয় চাকরিহারাদের। তাঁদের একাংশ বিকাশ ভবনের গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন বলে অভিযোগ। ঘেরাওয়ে আটকে পড়েন শতাধিক কর্মচারী। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন বিধাননগর পুরনিগমের চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত। তাঁকেও বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। অভিযোগ, অনেকে সব্যসাচীর গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলেন। পরে পুলিশ তাঁকে বার করে আনে। এর পর রাত অবধি অবস্থান মোটের উপর শান্তিপূর্ণ ছিল। আচমকা রাত ৮টার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের লাঠিচার্জের ফলে বিক্ষোভকারীদের অনেকেই আহত হয়েছেন। অভিযোগ, কারও মাথা ফেটে গিয়েছে, কারও পায়ে আঘাত লেগেছে।
বিকাশ ভবনের ভেঙে পড়া দরজাটি সবুজ রঙের দড়ি দিয়ে বাঁধা হয়েছে। যখন আন্দোলনকারীদের চাপে দরজাটি ভেঙে গিয়েছিল, সেই সময়ে ভিতরে কোনও পুলিশ ছিল না বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার চাকরিহারাদের এই কর্মসূচির বিষয়ে পুলিশ কি আদৌ অবগত ছিল? শাসকদলের অন্দরেই সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, এর আগে চাকরিহারা শিক্ষকদের ডিআই অফিস অভিযানে অনুরূপ উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। কসবার ডিআই অফিসের সামনে বিক্ষোভকারীদের সরাতে বলপ্রয়োগ করেছিল পুলিশ। এক পুলিশ আধিকারিককে দেখা গিয়েছিল চাকরিহারা শিক্ষককে লাথি মারতে। তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলের ভিডিয়ো প্রকাশ করে বলপ্রয়োগের কারণ ব্যাখ্যা করেছিল।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এসএসসির ২৫,৭৩৫ জনের চাকরি বাতিল হয়ে গিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, নতুন করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে কমিশনকে। অভিযোগ, এর ফলে অনেক ‘যোগ্য’ শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীরও চাকরি গিয়েছে। তাঁরাই আন্দোলনে নেমেছেন। মামলাটি এখনও বিচারাধীন। আদালত পরে জানায়, ‘যোগ্য’ শিক্ষকেরা চলতি মরসুমে স্কুলে যেতে পারবেন এবং বেতন পাবেন। ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।