সরেই গেলেন রণজিৎ, পিছোল সাক্ষ্য

চার্জ গঠন আগেই হয়ে গিয়েছিল। ধার্য ছিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন। এজলাসে হাজির হয়ে যান সাক্ষীও। কিন্তু সরকারি কৌঁসুলি নিজেকে মামলা থেকেই সরিয়ে নেওয়ায় শুরু করা গেল না বিচার প্রক্রিয়া।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:২২
Share:

রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

চার্জ গঠন আগেই হয়ে গিয়েছিল। ধার্য ছিল সাক্ষ্যগ্রহণের দিন। এজলাসে হাজির হয়ে যান সাক্ষীও। কিন্তু সরকারি কৌঁসুলি নিজেকে মামলা থেকেই সরিয়ে নেওয়ায় শুরু করা গেল না বিচার প্রক্রিয়া।

Advertisement

উল্টে আরও পিছিয়েই গেল এসআই অমিত চক্রবর্তী হত্যা মামলা। সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করলেন সিউড়ি অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

বস্তুত, দিন কয়েক আগেই মামলার সরকারি আইনজীবী রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধীর কাছে নতুন কৌঁসুলি চেয়েছিলেন নিহতের স্ত্রী পুতুলদেবী। জেলাশাসক এখনও এ নিয়ে তাঁর কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে ওই আবেদন জমা পড়ার পরে নিজেই মামলার সরকারি কৌঁসুলির পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে জেলাশাসকের কাছে আবেদন জানান রণজিৎবাবু। তিনি আর ওই মামলার শুনানিতে যোগ দিতে পারবেন না, এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ বিচার শুরুর আগেই বিচারক ভট্টাচার্যকে তা লিখিত ভাবে জানান রণজিৎবাবু।

Advertisement

২০১৪ সালের ৩ জুন দুবরাজপুরের যশপুর পঞ্চায়েতের আউলিয়া গোপালপুর গ্রামে ১০০ দিন প্রকল্পে একটি পুকুর সংস্কার করাকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও সিপিএমের সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল। ওই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের ছোড়া বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন দুবরাজপুর থানার টাউনবাবু অমিত চক্রবর্তী। দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অমিতবাবুর ৫৫ দিনের লড়াই শেষ হয় ওই বছর ২৮ জুলাই। ঘটনার পর ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল পুলিশ। অভিযুক্তদের তালিকায় নাম ছিল শাসকদলের যশপুরের অঞ্চল সভাপতি তথা দুবরাজপুর পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ আলিম শেখ-সহ এলাকার প্রায় ৩০ জন শাসকদলের কর্মী-সমর্থকের। অভিযুক্তদের তালিকায় নাম ছিল সিপিএমের জোনাল নেতা সৈয়দ মকতুল হোসেন-সহ বেশ কিছু সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরও। সম্প্রতি চার্জশিটে নাম থাকা আলিম-সহ ৩৬ জনকে ‘নিরপরাধ’ বলে দাবি করে তাদের নাম ওই মামলা থেকে বাদ দেওয়ার আর্জি আদালতে জানান রণজিৎবাবু। প্রবল সমালোচনার পরে সেই আবেদন প্রত্যাহারল করে নিলেও তখন থেকেই রণজিৎবাবুর উপর কার্যত একপ্রকার অনাস্থাই জন্ম নেয় নিহতের পরিবারের মধ্যে।

এ দিন শুনানির শুরুতেই রণজিৎবাবু বিচারককে জানান, তিনি অতিরিক্ত কাজের চাপে আর এই মামলার দায়িত্ব নিতে পারবেন না, এই মর্মে জেলাশাসককে আগেই জানিয়েছেন। ‘‘এত স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কাউকে পিপি হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া যায়নি। তাই জেলাশাসকের নির্দেশ মেনেই আপনার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি নির্ধারিত শুনানি স্থগিত করে তা যেন দিন কয়েক পিছিয়ে দেন।’’— বলে ওঠেন ওই সরকারি কৌঁসুলি। বিচারক তখন বলে ওঠেন, ‘‘এত জন অভিযুক্ত জেল হাজতে রয়েছেন। বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্যই এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। অনেকেই জামিনের আবেদন করছেন। সেগুলি বিচারধীনও।’’ এর পরেই খানিকটা ক্ষোভের সুর শোনা যায় বিচারকের কথায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আগে কেন এই আবেদন জানালেন না? আদালতের তো কিছুটা সময় প্রয়োজন। সরকারি আইজীবী ছাড়া কী ভাবে মামলা চলবে!’’ জবাবে রণজিৎবাবু জানান, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে তিনি কোনও ভাবেই এই মামলার দায়িত্ব নিতে পারবেন না। জেলাশাসকের নির্দশেই তিনি এই আবেদন করছেন। দিন কয়েকের মধ্যেই জেলাশাসক নতুন আইনজীবী নিয়োগ করবেন বলেও রণজিৎবাবু এ দিন এজলাসে দাবি করেন।

ঘটনা হল, এ দিন আদালতে ১৬ জন অভিযুক্তই উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষী হিসাবে হাজির ছিলেন মহম্মদ ইমরান খান নামে দুবরাজপুর থানায় কর্মরত প্রাক্তন এক পুলিশকর্মীও। রণজিৎবাবুর বক্তব্যের পরে বিপক্ষের আইনজীবীর তরফে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘নতুন করে পিপি নিয়োগে কমপক্ষে দু’সপ্তাহ বিলম্ব হবে।’’ অভিযুক্তদের অনেকেরই শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিচারকের কাছে জামিনের আবেদনও করেন তাঁরা। বিচারক অবশ্য তাঁদের স্পষ্টই জানিয়ে দেন, ‘‘রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনও আইনজীবী নেই। তাই ওই আবেদন মঞ্জুর করা সম্ভব নয়।’’ তবে, তিনি জেল সুপারকে অসুস্থদের শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে প্রয়োজন হলে ধৃতদের রাজ্যের কোনও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন।

এ দিন আদালতে উপস্থিত নিহতের স্ত্রী পুতুলদেবী বলেন, ‘‘আমি চেয়েছিলাম। সরকারি আইনজীবী সরে দাঁড়িয়েছেন। সব কিছু একসঙ্গে সম্ভব নয়। নিয়ম মেনেই পরে সাক্ষ্যগ্রহণ হবে। আমরা খুশি।’’ যদিও সাক্ষ্যগহরণ পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ অভিযুক্তদের পরিবারের লোকজন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন