স্মৃতি: শহিদ ছেলের ছবি আঁকড়ে কনকলতাদেবী। নিজস্ব চিত্র
ব্যবধান এক বছর আট মাস। এখনও দগদগে বাড়ির ছেলে হারানোর স্মৃতি। তার মাঝেই ফের সিআরপি কনভয়ে গাড়িবোমা হামলা। নিহত ৪২ জন ভারতীয় জওয়ান। ঘটনাস্থল সেই জম্মু-কাশ্মীর। সংবাদমাধ্যমে ভেসে উঠছে নিহত শহিদ জওয়ানদের পরিবারগুলির হাহাকারের ছবি। সে ছবি দেখে আরেক শহিদের মায়ের চোখ থেকে বেরিয়ে এল জল।
শুক্রবার সকালে সবংয়ের মশাগ্রামে বাড়ির বারান্দায় ছেলের ছবিতে চোখ রেখে বসেছিলেন কনকলতা মাইতি। ২০১৭ সালের ৩ জুন জম্মু-শ্রীনগর জাতীয় সড়কের কাজিগুন্দে সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। সেই হামলায় মৃত্যু হয়েছিল কনকলতার ছেলে দীপক মাইতির। সে সময় এসেছিলেন নেতা-মন্ত্রীরা। গ্যান স্যালুটে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কেলেঘাই নদীর তীরে হয়েছিল বাড়ির ছেলের শেষকৃত্য। তার পরে পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় দেড় বছর। ক্রমেই মানুষের মনে ফিকে হতে বসেছে শহিদ দীপকের স্মৃতি। প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও গ্রামে প্রতিষ্ঠা হয়নি শহিদের মূর্তি। বৃহস্পতিবার বিকেলে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আধাসেনার কনভয়ে বিস্ফোরণে ৪২জন জওয়ানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরে মন খারাপ দীপকের পরিজনদের। জঙ্গির হাতে আর কোনও সেনা যাতে খুন না হয়, সরকারের কাছে সেই নিশ্চয়তা চাইলেন কনকলতা। একই দাবি দীপকের স্ত্রী রিক্তার।
এ দিন কনকলতা বললেন, “ছেলেগুলোকে এভাবে পাঠিয়ে দেওয়ার পরে তাঁরা মরল না বাঁচল সেসব দেখার দায়িত্ব কী সরকার নেবে না? ছেলে হারানোর শোক কী, তা আমি জানি। এই ক্ষতি অপূরণীয়। ছেলের মৃত্যুর পরে এককালীন কয়েকটি টাকা পেয়েছিলাম। আর কোনও সাহায্যের আশাও করি না। এখন কান্নাই সম্বল!” মেয়ের পড়াশোনোর জন্য রিক্তা পিংলার মালিগ্রামে বাপের বাড়িতে থাকেন। ফের এমন ঘটনায় স্বামী হারানোর শোক ফিরে এসেছে। রিক্তা বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ পেয়েছি। কিন্তু স্বামীকে তো ফিরে পাইনি। আবার সেই স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে। আমার স্বামী ১৯বছর চাকরি করেছেন। কিন্তু গত তিন-চার বছরে মৃত্যু মিছিল দেখছি। সরকার কী করছে? কঠোর পদক্ষেপ চাইছি।’’ দীপকের বড়দা উত্তমের কথায়, ‘‘বৃহস্পতিবার এই খবর পাওয়ার পর থেকে ভাইয়ের স্মৃতি ভেসে উঠছে। বাড়ির ছেলেকে তো আর ফিরে পাব না। কিন্তু আর কোনও শহিদ পরিবারের যেন আমাদের মতো পরিস্থিতি না হয়।’’
গ্রামে দীপকের স্মৃতিতে গড়ে ওঠেনি মূর্তি। তবে তাঁকে ভোলেনি তাঁর স্কুল মশাগ্রাম শিবানন্দ বিদ্যাপীঠ। স্কুলের টিচার ইন-চার্জ শান্তুনু অধিকারী বলেন, “আমরা বার্ষিক অনুষ্ঠানের পুরস্কারটি ‘শহিদ দীপক মাইতি স্মৃতি পুরস্কার’ হিসাবে চালু করেছি। কিন্তু এভাবে জঙ্গিদের হাতে জওয়ানদের শহিদ হওয়ার ঘটনা বন্ধ না হলে নব প্রজন্মকে তাঁদের পরিবার সেনাবাহিনীতে পাঠাতে চাইবে না।’’