বদলার দাবিতে ফুটছে দেশ, বদলা চান না বাবলুর স্ত্রী, যুদ্ধ সমাধান নয়, বললেন তিনি

বদলার দাবিতে ফুটছে দেশের বিভিন্ন মহল। ফুটছে তাঁর পাড়া। কিন্তু তিনি বদলা চান না।

Advertisement

নুরুল আবসার ও কল্লোল প্রামাণিক

বাউড়িয়া ও তেহট্ট শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৩৮
Share:

বাউড়িয়ার বাড়িতে সিআরপিএফ জওয়ান বাবলু সাঁতরার কফিন আঁকড়ে স্ত্রী ও মেয়ে। শনিবার। —ফাইল চিত্র।

বদলার দাবিতে ফুটছে দেশের বিভিন্ন মহল। ফুটছে তাঁর পাড়া। কিন্তু তিনি বদলা চান না।

Advertisement

শনিবার তখনও এসে পৌঁছয়নি তাঁর স্বামীর কফিনবন্দি দেহ। সকাল থেকে বাউড়িয়ার চককাশী রাজবংশীপাড়ায় ভিড়। ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান উঠছে, ‘বাবলু সাঁতরা অমর রহে’। দাবি উঠছে দোষীদের শাস্তির। তার মধ্যেই মুখ খুললেন মিতা। পুলওয়ামায় জঙ্গি হানায় নিহত সিআরপিএফ জওয়ান বাবলুর স্ত্রী বলেন, ‘‘যুদ্ধে এই সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি না। যুদ্ধে আরও মায়ের কোল খালি হবে। সরকারের উচিত সমাধানের পথ খোঁজা। তবে, যুদ্ধের মাধ্যমে নয়।’’

জঙ্গিদের নৃশংসতার প্রতিবাদে ঝড় উঠছে সর্বত্র। কার্গিল-যুদ্ধে বাবাকে হারানো গুরমেহর কৌর আগেই বলেছিলেন, ‘‘আমাদের আসল শত্রু যুদ্ধ।’’ শুক্রবার ফের টুইট করেন, ‘‘দেশবাসীকে তাতানো চলছে। হামলার চক্রটা বন্ধ হওয়া দরকার।’’ দু’দিন আগে স্বামীকে হারানো মিতাও বললেন, যুদ্ধ সমাধান নয়।

Advertisement

পুলওয়ামার ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন নদিয়ার পলাশিপাড়ার হাঁসপুকুরিয়ার তিলিপাড়া গ্রামের সুদীপ বিশ্বাসও। এ দিন সেনাবাহিনীর বিশেষ বিমানে দুই জওয়ানের কফিনবন্দি দেহ কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় পৌনে চারটে নাগাদ। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় একটি কফিন কাঁধে করে নামান। বিমানবন্দরের ৪ নম্বর ভিআইপি গেটের সামনে ছাউনিতে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল নামে। সিআরপিএফ-এর তরফে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। তিন বাহিনী শ্রদ্ধা জানায়। পুলিশকর্তা, মন্ত্রীরাও ফুল-মালা দেন।

আরও পড়ুন: কফিনেই শাঁখা ভাঙলেন বাবলুর স্ত্রী

বাবলুর মাকে সান্তনা দিচ্ছেন লকেট চট্টোপাধ্যায়।

এ দিন চককাশীর সর্বত্র উড়েছে জাতীয় পতাকা। অনেক বাড়িতে হাঁড়ি চড়েনি। খোলেনি দোকান-বাজার। সকাল থেকে রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ। তাঁরা একবার বাবলুর কফিন ছুঁতে চান। কফিন এসে পৌঁছয় সাড়ে ছ’টা নাগাদ। বাড়ির সামনের মাঠে সিআরপিএফের তরফে ‘গান স্যালুট’ দেওয়া হয়। বিদায় জানানো হয় নিহত সেনানীকে।

আরও পড়ুন: কাল হল দেরিতেই, আফশোস যাচ্ছে না বাড়ির লোকের

মিতা আগেই বলেছিলেন, ‘‘শুনেছি, ওঁদের কনভয়ে নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিল। ঠিক-ভুল জানি না। তবে স্বামীর ইউনিট ছাড়া এ দিন বিকেল পর্যন্ত কেন্দ্রের তরফে কেউ যোগাযোগ করেননি। আমি সামান্য বেতনে বেসরকারি স্কুলে পড়াই। মেয়েকে নিয়ে চলাটাই এখন চিন্তার। সরকার কিছু করুক।’’ প্রয়োজনে তিনি সেনাবাহিনীতেও নাম লেখাতে রাজি বলে জানিয়েছেন মিতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সবাই যদি পিছিয়ে যায়, দেশরক্ষা করবে কারা?’’

সুদীপের দেহ তিলিপাড়ায় পৌঁছয় রাতে। পরের ছুটিতে এসে যে মাঠে বন্ধুদের নিয়ে ক্রিকেট খেলবেন বলে গিয়েছিলেন ওই যুবক, সেখানেই মঞ্চ করা হয়েছিল। এক দিকে টাঙানো জাতীয় পতাকা। অন্য কোণে গ্রামবাসীদের পোস্টার— ‘আমরা তোমাকে ভুলব না’। বিমানবন্দর থেকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মৃতদেহ নিয়ে কনভয় আসার সময় রাস্তার দু’পাশে অসংখ্য মানুষ ভিড় করেন। জায়গায়-জায়গায় গাড়ি থামিয়ে কফিনে পুষ্পস্তবকও দেওয়া হয়। কফিন পৌঁছনোর পরে ‘গান স্যালুট’ দেয় জেলা পুলিশ। এখানেও গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে রান্না হয়নি। বাড়িতে পাথরের মূর্তির মতো বসেছিলেন সুদীপের বাবা সন্ন্যাসীবাবু। আর হাহাকার করছিলেন মা মমতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন