প্রতীকী ছবি।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। জেলা প্রশাসন চাইছে নির্বাচনের আগেই সমস্ত প্রকল্পের কাজে আরও গতি আনতে। বিশেষ করে একশো দিনের কাজ। আরও বেশি শ্রমিককে কাজ দিয়ে এলাকার উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্প সম্পূর্ণ করায় জোর দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু বাস্তবেও ছবিটা কি তা-ই?
না। কাজের আগে মজুরি চাইছেন শ্রমিকেরা। বড় অঙ্কের মজুরি বকেয়া। বিভিন্ন পঞ্চায়েতও প্রশ্ন তুলছে, গত কয়েক মাস ধরে কাজ করেও টাকা পাননি শ্রমিকেরা, এখন কী ভাবে গতি আনা যাবে? তবে জেলা প্রশাসনের শীর্ষস্তরের দাবি, প্রকল্পে টাকা ঢুকতে শুরু করেছে। বকেয়া মজুরি দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া হবে।
মুখ্য সচিবের পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকের পরেই একশো দিনের কাজের গড় শ্রম দিবস আরও বাড়তে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রথম ধাপে জেলার সমস্ত পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও বিডিওদের নিয়ে বৈঠক করে কাজে গতি আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলাশাসক। পরের ধাপে মহকুমায় এসে এই ধরনের বৈঠক করছেন তিনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, মহকুমাস্তরের বৈঠকগুলিতে পঞ্চায়েত ভিত্তিক একশো দিনের কাজ আর অন্য প্রকল্পের হাল-হকিকত খতিয়ে দেখছেন তিনি। পিছিয়ে থাকলে জুটেছে তিরস্কার।
রাজ্য সরকার জল সংরক্ষণে উষর মুক্তি প্রকল্প নিয়েছে। ওই প্রকল্পের অধিকাংশই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে হবে। একশো দিনের সঙ্গে অন্য কয়েকটি দফতরের তহবিল যোগ করে বড় প্রকল্পও করতে চাইছে প্রশাসন। স্থায়ী সম্পদ তৈরি হবে এতে। নিচু স্তরে বৈঠক করে এই সমস্ত কাজে গতি আনতে চাইছেন জেলাশাসক। কিন্তু বাধ সাধছে বকেয়া মজুরি।
অঙ্কটা কত?
প্রশাসন সূত্রের খবর, রবিবার পর্যন্ত জেলায় একশো দিনের কাজে মজুরি বকেয়া ৮২ কোটির কিছু বেশি টাকা। সূত্রের খবর, গত তিন-চার মাস কোনও মজুরি পাননি শ্রমিকেরা। জানুয়ারিতে কিছু টাকা শ্রমিকদের তহবিলে এসেছে। সেটা অক্টোবর মাসের কাজের জন্য— চার
মাস দেরিতে।
ব্লক বকেয়া টাকা*
আড়শা ৩ কোটি ৪৩ লক্ষ
বাঘমুণ্ডি ৫ কোটি ১১ লক্ষ
বলরামপুর ৪ কোটি ৯৯ লক্ষ
বরাবাজার ২ কোটি ৯৫ লক্ষ
বান্দোয়ান ৭ কোটি ২৯ লক্ষ
হুড়া ৪ কোটি ১২ লক্ষ
জয়পুর ১ কোটি ২৫ লক্ষ
ঝালদা ১ ৭ কোটি ৫৬ লক্ষ
ঝালদা ২ ৪ কোটি ৮ লক্ষ
কাশীপুর ৫ কোটি ৫ লক্ষ
মানবাজার ১ ৩ কোটি ২১ লক্ষ
মানবাজার ২ ৪ কোটি
নিতুড়িয়া ১ কোটি ৩২ লক্ষ
পাড়া ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ
পুঞ্চা ৯ কোটি ৯ লক্ষ
পুরুলিয়া ১ ২ কোটি ৯ লক্ষ
পুরুলিয়া ২ ২ কোটি ৩৮ লক্ষ
রঘুনাথপুর ১ ৩ কোটি ৭৪ লক্ষ
রঘুনাথপুর ২ ২ কোটি ৫৪ লক্ষ
সাঁতুড়ি ২ কোটি ৭৪ লক্ষ
* ১৮ ফ্রেবুয়ারি ২০১৮ পর্যন্ত।
জানুয়ারির শেষে ধান কাটা হয়ে যাওয়ায় গত বছর এই সময়ে একশো দিনের কাজের চাহিদা ভালই ছিল। কয়েক জন বিডিও জানাচ্ছেন, জানুয়ারির শেষ থেকে বর্ষা আসার আগে পর্যন্ত এই চাহিদাটা থাকে। এ বার পুরো উল্টো। জেলার জঙ্গলমহল থেকে শিল্পাঞ্চল, শাসকদলের হাতে থাকা বা বিরোধীদের— অনেক পঞ্চায়েতই বলছে, কাজের কথা বললে শ্রমিকেরা বকেয়া টাকা আগে মেটাতে বলছেন। প্রায়ই বিভিন্ন পঞ্চায়েতে মজুরির দাবিতে বিক্ষোভও হচ্ছে। সূত্রের খবর, আগে দৈনিক চারশো শ্রমিককে কাজ দিয়েছে এমন পঞ্চায়েত এখন দিনে দু’শো জনকেও কাজে নামাতে পারছে না।
তিন-চার মাস একশো দিনের মজুরি না পেয়ে শ্রমিকেরা ঝাড়খণ্ড বা পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পাঞ্চলে চলে যাচ্ছেন— এমন নজিরও রয়েছে। সাঁতুড়ি, নিতুড়িয়ার কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধানদের দাবি, আসানসোল, বার্নপুর এমনকী ধানবাদ শিল্পাঞ্চলে কাজের খোঁজে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে। তাঁরা বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করলে নগদ মজুরি মেলে। তাই সে দিকেই ঝুঁকছেন ওঁরা।’’
সমস্যার কথা মানছে জেলা প্রশাসনের একাংশও। তবে শীর্ষমহল আশাবাদী। প্রশাসন সূত্রের দাবি, একশো দিনের কাজের টাকা সম্প্রতি ছাড়তে শুরু করেছে কেন্দ্র সরকার। রাজ্যের মাধ্যমে সেটা জেলায় ঢুকছে।
পুরুলিয়া জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘সমস্ত পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে শ্রমিকরা বকেয়া মজুরি পেয়ে যাবেন। একশো দিনের কাজে আরও বেশি প্রকল্প করতে হবে। যত বেশি সম্ভব শ্রমিককে কাজ দিতে হবে। আরও ভাল ভাবে কাজ করতে হবে।’’