শহর পরিক্রমায় বিজয়বাবু। —নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ায় সামনা সামনি দেখা হয়েছিল নেতাজির সঙ্গে। পুরুলিার শিল্পাশ্রমে গাঁধীজির সঙ্গে। সমস্ত জীবন বনস্পতির ছায়া দিয়ে স্মৃতি এখনও সবুজ। স্বাধীনতা সেনানী বিজয়কুমার দত্ত সোমবার পা দিলেন ১০২ বছরে।
বাড়ি থেকে ইদানীং আর বিশেষ বেরোনো হয় না। নবীন প্রজন্মের অনুগামীরা আসেন দেখা করতে। তাঁরাই আব্দার করেছিলেন, জন্মদিনের দিন বেরোতে হবে। দেখা করতে হবে সবার সঙ্গে। অনুরোধ ফেলতে পারেননি বিজয়বাবু। শহরে আসা নতুন যান টোটোতে চড়লেন। বাজনায় দেশাত্মবোধক গানের সুর তুলে তাঁর আগে চলল ব্যান্ড পার্টি। পিছনে অনুগামীদের মিছিল। পথে শহরের বাসিন্দারা এগিয়ে এসে শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলেন তাঁকে।
জেলার ইতিহাস গবেষক প্রদীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘গাঁধীজির ডাকে এখনকার পুরুলিয়া তথা সেই আমলের মানভূম জেলাও পথে নেমেছিল। ১৯৪২ সালে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে মানবাজার থানা ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। পুলিশের ছোঁড়া গুলিতে থানার সামনেই শহিদ হন গোবিন্দ মাহাতো এবং চুনারাম মাহাতো নামে দুই যুবক। আহত হন কয়েক জন সত্যাগ্রহী। বিজয়বাবু তখন ২৮ বছরের যুবক। আহতদের সেবা করতে গিয়ে তিনিও পুলিশের রোষে পড়েন। ব্রিটিশ পুলিশ তাঁকে জেলে পাঠায়।’’
ইংরেজ তাঁকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। জরাও হার মেনেছে তাঁর কাছে। মাঝিহিড়া আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা চিত্তভূষণ দাশগুপ্তের চেয়ে বয়সে কয়েক মাসের ছোট বিজয়বাবু শতবর্ষ পার করেও তরতাজা যুবক। অনুগামী সজল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দেবাদিদেব গোস্বামীরা জানান, ইদানীং চোখে একটু কম দেখছেন। কানে শোনার যন্ত্রও ব্যবহার করতে হচ্ছে মাঝে মধ্যে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ছেলে উত্তম দত্ত জানান, এখনও রোজ ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে পড়েন বিজয়বাবু। বাড়ির উঠোনে হাঁটাহাঁটি করেন মিনিট পনেরো। বিজয়বাবুর নাতি গৌরহরি দত্ত বলেন, ‘‘ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অন্য কোনও রোগবালাই নেই দাদুর।’’
আর সুস্থ থাকার রহস্য নিয়ে কী বলছেন শতায়ু যুবক? একটু হেসে বিজয়বাবু বলেন, ‘‘পরিমিত খাওয়াদাওয়া, মাদক বর্জন আর একটু যোগাসন। তবে সবচেয়ে জরুরি হল চিন্তামুক্ত থাকা।’’