নিরাপত্তা: পুরুলিয়া আদালতে তোলা হচ্ছে গ্রেফতার হওয়া বিজেপি নেতা-কর্মীদের। ছবি: সুজিত মাহাতো
প্রশাসনিক আধিকারিকের দায়ের করা শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে পুরুলিয়ার জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির দুই বিজেপি সদস্যকে গ্রেফতার করল পুলিশ। মামলা হল ওই সমিতিতে বিজেপির আরও ছ’জন সদস্যের বিরুদ্ধেও। ওই দিন বিকেলে বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির এক সদস্য-সহ বিজেপির ৯ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অভিযোগ ছিল, বাহিনীর উপরে চড়াও হয়ে চার জন পুলিশ কর্মীকে জখম করার। শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া সবাইকে তোলা হয় পুরুলিয়া আদালতে। বিচারক সবার জামিন মঞ্জুর করেছেন। বিজেপির আইনজীবী শেখর বসু বলেন, ‘‘নিগ্রহ আর মারধরের অভিযোগ করলেও ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টই জমা করতে পারেনি পুলিশ।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পেরনোর আগেই আদালতে তোলা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে চিকিৎসা শুরু হয়েছে। ডাক্তারি পরীক্ষা, রিপোর্ট তৈরি— সবই হচ্ছে।’’
গোলমালের আশঙ্কায় পুরুলিয়ার যে ক’টি পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠন স্থগিত ছিল, তার মধ্যে অন্যতম জয়পুর। বৃহস্পতিবার সেখানে বোর্ড গঠন হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিডিও (জয়পুর) শ্রীমন্ত মালিক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁর জায়গায় ওই দিন সভা পরিচালনা করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছিল বিডিও (আড়শা) অমিত গায়েনকে। বোর্ড গঠন হয়। অমিতবাবু জানান, ১০-০ ভোটে কংগ্রেসের সদস্য সভাপতি নির্বাচিত হন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহ-সভাপতি পদেও জয়ী হয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী। তিনি জানান, কিছু সদস্য ওই দু’টি পদের জন্য লড়াইয়ে ভোট দেননি।
বিজেপি এ দিকে সভার পরে অভিযোগ তোলে, ভোট নেওয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ছিল না। দাবি করা হয়, ব্যালট জমা করতে হচ্ছিল ওই আধিকারিকের হাতেই। কোনও বাক্স ছিল না। আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়েছিল। সেই ভোটে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন অমিতবাবু। বিজেপির জেলা সম্পাদক তথা জয়পুরের নেতা রবীন সিংহদেও বলেন, ‘‘আড়শায় বিডিও-র কলমে ভোট দিয়ে তাঁরই হাতে ব্যালট জমা করতে হচ্ছিল। দেখা যায়, বিজেপির পাঁচ জনের ভোট বাতিল হয়েছে। আমরা এগিয়ে থাকলেও তৃণমূল সমিতি দখল করে ফেলে। আমাদের দৃঢ় ধারণা কারচুপি হয়েছে। আদালতেও গিয়েছি।’’
তাঁর দাবি, জয়পুরেও ভোটের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিজেপির সদস্যরা। অমিতবাবু আমল দেননি। তাঁরা ভোট বয়কটের কথা বলতেই তৃণমূলের প্রস্তাবিত প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করে দেন। ঘটনার পরে বিজেপি দাবি করেছিল, জয়পুরের ঘটনাতেও আদালতে যাবে তারা। এ দিকে, পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অমিতবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, বোর্ড গঠনের সভায় শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে। সমিতির ৬ জন বিজেপি সদস্যের বিরুদ্ধে রুজু হয় মামলা। গৌতম মাহাতো এবং রাকেশ মাহাতো নামে তাঁদের মধ্যে দু’জনকে রাতেই গ্রেফতার করে পুলিশ।
বলরামপুরে বোর্ড গঠনের পরে সরাই ময়দানের কাছে বিজেপির পার্টি অফিসের সামনে গোলমাল হয়। বিজেপির অভিযোগ, বিনা প্ররোচনায় পুলিশ পার্টি অফিসে চড়াও হয়ে লোকজনকে মারধর করে। পুলিশের অভিযোগ, পার্টি অফিসের সামনে তাদের উপরেই আক্রমণ হয়েছিল। ঘটনায় বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য বিরিঞ্চি কুমার, বিজেপির জেলাসম্পাদক বিবেক রঙ্গা-সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ দিন সবার জামিন মঞ্জুর হয়ে যাওয়ার পরে বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী কটাক্ষ করেন, ‘‘আমাদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে। আর মামলাও হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে। বোঝাই যাচ্ছে, শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে প্রশাসন।’’ এ দিন প্রতিক্রিয়া চাইতে ফোন করা হয়েছিল বিডিও (আড়শা) অমিত গায়েনকে। সাংবাদিক পরিচয় শুনেই ফোন কেটে দেন তিনি। বিদ্যাসাগরবাবু দাবি করেছেন, ডাকে থানায় অভিযোগপত্র পাঠাবেন তাঁরা। জয়পুর পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনে বেনিয়মের অভিযোগ নিয়ে যাবেন আদালতে।