নির্বাচনী বিধি উঠে যাওয়ার পরেই পুলিশ প্রশাসনকে আবার ঢেলে সাজা শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার পাশাপাশি জেলায় জেলায় শুরু হয়েছে পুলিশের বদলি। বীরভূমেও তার ব্যতিক্রম হল না। লোকসভা নির্বাচন মিটে যাওয়ার পরেই জেলায় আবার পুলিশ সুপার হিসাবে যোগ দিয়েছেন শ্যাম সিংহ। বৃহস্পতিবার জেলার বিভিন্ন থানার আধিকারিকদেরও পরিবর্তন করা হল। এক সঙ্গে ২৭ জন পুলিশকর্মী ও আধিকারিকের রদবদল নিয়ে জেলা পুলিশে গুঞ্জন উঠেছে।
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল এই রদবদলের পিছনে কাজ করেছে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে। যদিও পুলিশ সুপার এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘এটা রুটিন বদলি।’’
এ বার লোকসভা ভোটে বীরভূম ও বোলপুর আসনে তৃণমূল জিতলেও বিপুল ভোট পেয়ে দু’নম্বরে উঠে এসেছে বিজেপি। ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, জেলার পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রে এগিয়ে বিজেপি। বিভিন্ন পুরসভার পাশাপাশি বহু ব্লকেও তৃণমূল পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি-র চেয়ে। সেরকমই একটি ব্লক খয়রাশোল। এই ব্লকের মোট ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টিতেই লিড পেয়েছে গেরুয়া শিবির। এ দিন যে পুলিশ আধিকারিদের বদলি হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন খয়রাশোল থানার ওসি সন্তোষ ভকত। তাঁকে সিউড়ি থানায় পাঠানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় খয়রাশোলের নতুন ওসি হলেন সঞ্জয় শ্রীবাস্তব। তিনি এর আগে জেলা গোয়েন্দা দফতার বা ডিআইবি-তে ছিলেন। এ বার দুবরাজপুর পুরসভা ও বিধানসভা কেন্দ্রে লিড পেয়েছে বিজেপি। দুবরাজপুর থানার ওসি দেবব্রত সিংহকে পাড়ুই থানায় বদলি করা হয়েছে। তাঁর জায়গায় নিয়ে আসা হয়েছে ইলামবাজার থানার ও মহম্মদ আলিকে। নানুর থানার বর্তমান ওসি আফরোজ হোসেনকে ইলামবাজার থানায় বদলি করা হয়েছে।
পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগে ময়ূরেশ্বর থানার ওসি চয়ন ঘোষকে বদলি করার জন্য বিজেপি-র পক্ষ থেকে সম্প্রতি দাবি জানানো হয়েছিল। সেই দাবিতে পথ অবরোধও করেন বিজেপি কর্মীরা। চয়নবাবুকে লাভপুর থানায় পাঠানো হয়েছে। লাভপুর ব্লক নিয়েও এখন চিন্তায় রয়েছে শাসকদল। লাভপুরের বিধায়ক মনিরুল ইসলাম দু’দিন আগেই দিল্লি গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। লাভপুরের ওসি অশোক সিংহ মহাপাত্র গিয়েছেন সিউড়ি থানায়। পাড়ুই থানার ওসি তন্ময় ঘোষকে ডিআইবি-তে পাঠানো হয়েছে।
মহম্মদবাজার ব্লকে বিজেপি-র উত্থান হয়েছে গত পঞ্চায়েত ভোট থেকেই। এ বারও গোটা ব্লকে বিজেপি-র চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। মহম্মদবাজার থানার ওসি তাপাই বিশ্বাসকে ময়ূরেশ্বরে বদলি করা হয়েছে। মহম্মদবাজার থানারই সাব ইন্সপেক্টর মনোজ সিংহ নানুর থানার ওসি-র দায়িত্ব পেয়েছেন। ডিআইও (ওয়ান) পদে কর্মরত মাধব চন্দ্র মণ্ডলকে মহম্মদবাজারের ওসি করা হয়েছে। সিউড়ি থানার মহিলা এসআই কস্তুরী মুখোপাধ্যায় চট্টোপাধ্যায়কে শান্তিনিকেতন থানার ওসি হিসাবে যোগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শান্তিনিকেতন থানা থেকে বিপ্লব দত্তকে চন্দ্রপুর থানার ওসি হিসাবে বদলি করা হয়েছে। ডিআইবি-তে কর্মরত এসআই নীলরতন ঘোষকে ওসি (সাইবার সেল) করা হয়েছে।
এ ছাড়াও বেশ কয়েক জন এসআই এবং এএসআই-কে এক থানা থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। ট্রাফিক অফিসারদেরও বিভিন্ন থানায় বদলি করা হয়েছে।