শেষমেশ নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলেন মুলুক হত্যাকাণ্ডে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৩৬ জন আসামি।
সোমবার সিউড়ি সিজেএম আদালতে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেন। সরকারি আইনজীবী কুন্তল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওই মামলায় অভিযুক্ত ৪৬ জনেরই যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল। এ দিন তাঁদের মধ্যে ৩৬ জন সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে আত্মসমর্পণ করেছেন। বিচারক প্রত্যেককেই সিউড়ি সংশোধনাগারে পাঠিয়েছেন।’’
সরকারি আইনজীবী জানান, বোলপুর থানার মুলুক গ্রামে ১৯৮৭ সালের ১৯ নভেম্বর সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ৪ নকশালপন্থী কর্মীকে বিনা প্ররোচনায় হত্যা করার অভিযোগ উঠেছিল। ওই ঘটনায় খুন হয়েছিলেন শেখ জিয়াউদ্দিন(৪০), শেখ বুড়ো (২৮), সুধীর ঘোষ (৬৩) এবং তাঁর ছেলে নির্মল ঘোষ (২৮)। ওই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ২১ নভেম্বর বোলপুরে সর্বাত্মক বন্ধ পালিত হয়। রাজ্যজুড়েও প্রতিবাদ সভা হয়। সেই মামলার অভিযোগকারী ছিলেন মুলুক গ্রামেরই আদর্শ পল্লির বাসিন্দা মধুসূদন ঘোষ। তিনি তাঁরই বাড়ির সামনে ওই চার জন খুন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। খুনের ঘটনায় গ্রামের এবং আশেপাশের সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বোলপুর থানায় লিখিত অভিযোগ হয়েছিল।
ঘটনা হল, ১৯৮৯ সালে সিউড়ি জেলা জজ কোর্টে চার্জ গঠন হলেও সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব শুরু হতেই সময় লেগে যায় ২১ বছর। বিচার শেষ হতে লাগে ২২ বছর। ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ জেলা জজ দীপক সাহা রায় অভিযুক্ত ৪৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। জেলে থাকতে থাকতেই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে সাজাপ্রাপ্তেরা। তার পরেই তাঁদের জামিন হয়ে যায়। সেই মামলায় গত ৬ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া এবং ইন্দ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায়কেই পুনর্বহাল রাখেন। আসামিদের জামিন খারিজ করে দেন। আগামী এক মাসের মধ্যে দোষীদের সিউড়ি সিজেএম আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশও দেয়।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন সাজাপ্রাপ্তেরা। তাঁদের আইনজীবী রাজীব মজুমদার বলেন, ‘‘গত ৩১ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট অভিযুক্তদের দু’সপ্তাহের মধ্যে সিজেএম আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনেই ওঁরা আত্মসমর্পণ করেছেন। আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে ওঁদের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে। তখনই জানা যাবে ওঁরা জামিন পাবেন, না সংশোধনাগারেই থাকতে হবে।’’