হাতেনাতে: এই রাসায়নিক। আদ্রায়। নিজস্ব চিত্র
ঘন সবুজ পটল। সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে, কিন্তু পটলের রং মোটেও ফ্যাকাসে হচ্ছে না। দোকানদারের ছিটিয়ে দেওয়া জলে রঙ তাজা। ‘টাটকা’ পটল বলে দামও একটু চড়া। কেনাবেচা দিব্যি চলছে আদ্রার মূল আনাজ বাজার আর রেল শহরের অন্য বাজারগুলিতে। কিন্তু কতটা নিরাপদ এই ধরনের পটল? উঠছে প্রশ্ন। ক্ষতিকর রং মেশানোর অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবারই তিন জনকে হাতেনাতে ধরেছে দুর্নীতি দমন শাখা (ডিইবি)।
মঙ্গলবার ভোরে আদ্রার আনাজ বাজারে ওই অভিযান চলে। যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরা হলেন, বাজারের একটি আড়তের মালিক কার্তিক সাউ আর ওই আড়তের কর্মী বাবু বাউড়ি ও সোমনাথ তন্তুবায়। আটক করা হয়েছে দেড় টন পটল। ধৃতদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে তার মধ্যে দু’টি জামিন অযোগ্য বলে জানিয়েছে ডিইবি। তবে কার্তিকের দাবি, তাঁরা পটলে ক্ষতিকর রং মেশান না। ওই রং আনা হয় বস্তায় ক্রমিক নম্বর লেখার জন্য।
টাটকা দেখানোর জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক ও রং দেওয়া জলের মধ্যে পটল, বেগুন, উচ্ছে, করলা ডুবিয়ে রাখেন কিছু ব্যবসায়ী— কানাঘুষোয় এমনটা প্রায়ই শোনা যায় বাজারে। আনাজকে আরও সবুজ করতে ক্ষতিকারক তুঁতে পর্যন্ত মেশানো হয় বলে অভিযোগ। প্রশাসন সূত্রের খবর, এমন অভিযোগ বিভন্ন সূত্র থেকে কানে উঠেছিল মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্খা ভাস্করের। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আদ্রার আনাজ বাজারে ক্ষতিকারক রঙের মধ্যে আনাজ ডুবিয়ে রাখেন এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। এই মর্মে আমার কাছে অভিযোগ এসেছিল। বিষয়টি দেখার জন্য পুলিশ সুপারকে জানিয়েছিলাম।’’ সেই প্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার ভোরে অভিযান চালায় ডিইবি। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘দুর্নীতিদমন শাখার কর্মীরা প্রশংসনীয় কাজ করেছেন।”
কী ভাবে আনাজে মেশানো হয় ক্ষতিকারক রং? ডিইবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভিন্ জেলা থেকে আদ্রায় প্রতিদিন প্রচুর পটল আসে। সকাল ৬টা নাগাদ আড়ত খোলে। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ও আড়তদার তার আধ ঘণ্টা আগে থেকে আনাজের বস্তা ডুবিয়ে রাখেন আড়তের পাশে থাকা ছোট্ট সিমেন্টের চৌবাচ্চায় বা ড্রামে। তাতে থাকে রাসায়নিক ও রং
মেশানো জল।
আড়ত খোলার পরে সেই আনাজই আনা হয়। কিনে নিয়ে যান পাইকারি ব্যবসায়ী ও আনাজ বিক্রেতারা। ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশে যাওয়া আনাজ চলে যায় খোলা বাজারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আনাজ ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘রং ও রাসায়নিক মেশানো পটলের সুবিধা অনেক। দীর্ঘ ক্ষণ টাটকা দেখতে লাগে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবুজ থাকে পটলের রং। মাঝেমধ্যে শুধু একটু জল ছিটিয়ে নিতে হয়।”
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ আদ্রার আনাজ বাজারে ডিইবি-র ইনস্পেক্টর তাপসকুমার ঘোষ, এসআই সজল মিশ্র, এএসআই স্বপন চক্রবর্তী-সহ পাঁচ জনের একটি দল অভিযান চালিয়েছে। ডিইবির দাবি, কয়েক দিন ধরে বিষয়টি নজর করা হচ্ছিল। দেখা গিয়েছিল, আড়ত খোলার আগে, ভোর ৫টা-সাড়ে ৫টা নাগাদ ক্ষতিকর রাসায়নিক ও রঙের মিশ্রণে ডোবানো হয় পটলের বস্তা। হাতেনাতে ধরতে ভোরেই অভিযান হয়েছে। আটক হওয়া পটলের নমুনা পাঠানো হয়েছে খাদ্য সুরক্ষা দফতরে।