বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ গাড়ির, মৃত ৭

যে বাসটির সঙ্গে ওই গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছে, সেটি রামপুরহাট থেকে সিউড়ির দিকে যাচ্ছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৯ ০৬:১৩
Share:

বিধ্বস্ত: বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পরে দুমড়েছে যাত্রিবাহী গাড়ি। শুক্রবার গণপুরে। ছবি: পাপাই বাগদি

বহরমপুরে নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাচ্ছিলেন একই পরিবারের কয়েক জন। শুক্রবার বিকেলে জাতীয় সড়কে বাসের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কায় প্রাণ গেল সাত জনের। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পাঁচ জনের। হাসপাতালে প্রাণ হারান আরও দু’জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলছে ওই পরিবারের দুই সদস্যের।

Advertisement

এ দিন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ মহম্মদবাজারের কালীতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে, গণপুর জঙ্গল লাগোয়া রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, চালক ছাড়া হতাহতেরা সকলেই মহম্মদবাজারের কেওটপাড়ার বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতদের মধ্যে রয়েছেন সন্দীপ ভট্টাচার্য (৪৬), তাঁর স্ত্রী সমু ভট্টাচার্য (৪০) এবং ছেলে শমীক (১৫)। এ ছাড়াও মারা গিয়েছেন সন্দীপবাবুর দাদা সঞ্জয় ভট্টাচার্য (৫১), ভাইঝি মিস্টু (৬) ও তিতলি (২২) এবং তাঁদের গাড়ির চালক মিঠুন। তিতলি সঞ্জয়বাবুর মেয়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি সন্দীপ-সঞ্জয়ের খুড়তুতো ভাই রাহুল ও তাঁর স্ত্রী রিমি ভট্টাচার্য। রাহুলেরই মেয়ে মিস্টু।

কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা? যে বাসটির সঙ্গে ওই গাড়ির সংঘর্ষ হয়েছে, সেটি রামপুরহাট থেকে সিউড়ির দিকে যাচ্ছিল। ওই বাসেই সিউড়িতে যাচ্ছিলেন সৌম্যদীপ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘বাসের শেষের দিকে আমার সিট ছিল। গণপুরের কাছে হঠাৎ প্রচণ্ড আওয়াজ করে কিছু একটার সঙ্গে ধাক্কা মেরে বাসটা রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে যায়। ধাক্কা মারে একটা গাছে।’’ তিনি জানান, দুর্ঘটনা ঘটেছে তা বুঝে চিৎকার শুরু করেন তাঁরা। কেউ কেউ অল্পবিস্তর জখমও হন। সৌম্যদীপের কথায়, ‘‘বাস থেকে নামতেই শিউরে উঠি। রাস্তায় পড়েছিল একের পর এক রক্তাক্ত দেহ। বেশির ভাগেরই প্রাণ নেই। দুমড়ে যাওয়া। গাড়িতে আটকে ছিল কেউ কেউ।’’

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দুর্ঘটনাস্থল থেকে কিলোমিটার দুয়েক দূরে দিঘলগ্রাম। লোকমুখে খবর পেয়ে সেখান থেকেও বাসিন্দারা ছুটে আসেন। এলাকাবাসী আলমগির শেখ বলেন, ‘‘এমন দুর্ঘটনা আগে চোখের সামনে দেখিনি। কয়েকটা বাচ্চার দেহ রক্তে লাল হয়ে ছিল। আমরা সকলে মিলে উদ্ধার কাজ শুরু করি।’’ ঘটনার খবর পেয়ে সেখানে পৌঁছয় মহম্মদবাজার থানার পুলিশ। পুলিশের গাড়িতেই হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুর্ঘটনার জেরে জাতীয় সড়কের দু’টি লেনে যানচলাচল থমকে যায়। অন্য যানবাহনের চালক, যাত্রীদের কয়েক জনও উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, বাস বা গাড়ির একটি সম্ভবত ওভারটেক করতে গিয়েছিল। তার জেরেই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে বাসের চালক ও খালাসি পলাতক।

মৃত সন্দীপবাবু, সঞ্জয়বাবু এবং আহত রাহুল—তিন জনই পেশায় স্কুলশিক্ষক। এই ঘটনায় স্তম্ভিত কেওটপাড়ার বাসিন্দারা। একটা পরিবারের এত জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়। গ্রামবাসীদের অনেকেই গিয়েছেন হাসপাতালে।

সঞ্জয়বাবু ও সন্দীপবাবুর বৃদ্ধা বাবা-মা শম্ভু ভট্টাচার্য ও অনিমা ভট্টাচার্য রয়েছেন বাড়িতে। কিন্তু এ দিন এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর দেওয়া হয়নি তাঁদের কাউকেই। এলাকার কয়েক জন বলছেন, ‘‘কী ভাবে ওঁদের এ কথা জানানো হবে, তা-ই কেউ বুঝতে পারছে না। তাঁদের বাড়ির বেশিরভাগ লোকেরই যে মৃত্যু হয়েছে, সে কথা ওঁদের কাছে বলার সাহসও পাচ্ছি না আমরা।’’

অন্য দিকে, এ দিন বিকেলে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম জাতীয় সড়কেই পাথরবোঝাই ডাম্পারের সঙ্গে ধাক্কায় মৃত্যু হয় মোটরবাইক আরোহীর। রামপুরহাট থানার জয়রামপুর সেতুর কাছে দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম মিহির মণ্ডল (২২)। রামপুরহাট থানার মালসা গ্রামে বাড়ি। মণ্ডপশিল্পী মিহির মল্লারপুর থেকে কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। ওই বাইকে চার জন ছিলেন। জয়রামপুর সেতুর কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডাম্পারের সঙ্গে মোটরবাইকের ধাক্কা লাগে। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীনই মিহির মারা যান। আহত আরোহীকে বর্ধমান মেডিক্যল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন